পশ্চিমবঙ্গ এক সময়ে বিভিন্ন রাজা তথা জমিদারদের নিজস্বভূমি ছিল। কালের নিয়মে এখন আর সেই দিন নেই। বংশানুক্রমে বিভিন্ন শরিক তৈরী হওয়ায় সেই জমিদার ভবন বা রাজবাড়িগুলির যথাযথ সংস্কার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক ভবনগুলিকে সংস্কার করে সঠিক ভাবে মেলে ধরতে পারলে পর্যটদের যে আকৃষ্ট করা যাবে, তা বলাই বাহুল্য। এই ভাবনাকে মাথায় রেখে রাজ্য সরকার রাজ্যের হেরিটেজ বিল্ডিংগুলিকে হোটেল বানিয়ে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাতে উদ্যোগী হয়েছে। দরকার হলে অতিরিক্ত ঘর তৈরী করে তা হোটেল হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব অত্রি ভট্টাচার্য প্রতিটি জেলা শাসককে চিঠি দিয়ে এই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন বলে খবর। দফতরের আধিকারিকেরা মনে করছেন, বর্তমানের ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী বা ইটাচুনা রাজবাড়ী যেমন এখন পর্যটনে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে, তেমনি রাজ্যের আরো এইরকম প্রচুর হেরিটেজ বিল্ডিং চিহ্নিত করে সেগুলির নতুন ভাবে সংস্কার করলে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। পাশাপাশি উন্নতমানের থাকার ব্যবস্থা করা গেলে পর্যটকেরা সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন। খুব দ্রুত এই সম্পর্কিত তথ্য রাজ্য পর্যটন দফতরে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলা পরিষদের তরফ থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য বিডিও অফিস থেকে চেয়ে পাঠানো হয়েছে। একটি ফরম্যাট তৈরী করে তা পাঠানো হয়েছে, যা পূরণ করে আবার পাঠাতে বলা হয়েছে সকলকে।
জেলাশাসককে পাঠানো চিঠিতে পর্যটন দফতরের প্রধান সচিব জানিয়েছেন, আমাদের রাজ্যের প্রচুর ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যেগুলির গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলি সঠিক সংস্কারের অভাবে রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। সেগুলি চিহ্নিত করে, তার সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রাজ্যের মানচিত্রে তুলে ধরা হবে। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পর্যটন দফতরে জমা দিতে বলা হয়েছে। সেগুলি জমা পড়ার পর রাজ্য পর্যটন দফতর সেগুলি পরিদর্শন করবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। যে ফরম্যাটটি পাঠানো হয়েছে, তাতে জেলার নাম, হেরিটেজ কেন্দ্রের নাম, স্থান, কাছাকাছি রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও হাই রোডের নাম, মোট জমির পরিমান, ওই হেরিটেজ স্থানের মালিকের নাম ও টেলিফোন নম্বর, সেখানে বর্তমান ঘরের সংখ্যা, আরো নতুন ঘর বানানো সম্ভব কি না - তা নথিভুক্ত করে এবং ওই জায়গার একটি ছবি তুলে তা ই মেল করার কথা বলা হয়েছে। তথ্যগুলি নিয়ে তা পর্যালোচনা করা হবে এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কিভাবে এগোনো যায়।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই হাওড়ার আমতার রায় গুণাকর ভারত চন্দ্রের বাসস্থান, বীরভূমের নানুরে কবি চন্ডিদাসের বাড়ি, কেঁদুলির কবি জয়দেবের বাড়ি সংলগ্ন এলাকা চিহ্নিত করেছে সেখানকার ব্লক প্রশাসন।