বিশ্বের সর্বপ্রাচীন রেস্তোরাঁ হিল্টল

সুইৎজারল্যান্ডের সবচেয়ে বৃহত্তম ও ঐতিহাসিক শহরটি হল জুরিখ। আর এই জুরিখেই অবস্থিত এমন এক রেস্তোরাঁ যা সারা বিশ্বের এক সম্পদ বলা চলে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খাবার ও শেফ নিয়ে চলে এই রেস্তোরাঁটি। প্রতিদিন ১০০টি বুফে মেনুতে থাকে শুধুই নিরামিষ খাবার, যার স্বাদ নিতে রীতিমতো ভীড় হয়ে যায় রেস্টুরেন্টে। নিরামিষ খাবারের জন্য এতো ভীড়! অবাক হচ্ছেন তো? তবে এটাই সত্যি। বিখ্যাত এই রেস্টুরেন্টটির নাম হল হিল্টল।  

   

       হাউস হিল্টল শুধু জুরিখের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডাইনিং অপশন নয়, এটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস দ্বারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও ধারাবাহিকভাবে চলে আসা একটি নিরামিষ রেস্টুরেন্ট হিসাবে স্বীকৃত ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এটি এবং বর্তমানে হিল্টল পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের দ্বারা পরিচালিত।ভারতীয়, এশীয়, ভূমধ্যসাগরীয় এবং সুইস খাবারের প্রভাবের সমন্বয়ে তৈরী হাউস হিল্টলের মেনু কিন্তু গতানুগতিক আলু-সবজি ইত্যাদির নয়। বিভিন্ন রকমের সবজি ও অন্যান্য উপকরণের ব্যবহারে তৈরি হয় এখানকার খাবারগুলি।

        হাউস হিল্টলের নীচের ফ্লোরে রয়েছে অনানুষ্ঠানিক বুফে-সিস্টেম, আর এটির প্রথম ফ্লোরে রয়েছে আ-লা-কার্ট রেস্টুরেন্ট।

সাদা টেবিল-ক্লথ, বড় জানালা এবং একটি দেওয়ালে রাখা তাকগুলিতে আছে রান্নার বিভিন্ন বই- এভাবেই একটা সুন্দর অথেনটিক অ্যাম্বিয়েন্স তৈরি করা হয়েছে এখানে। গত দশকে, হিল্টল ব্র্যান্ড সমগ্র জুরিখ জুড়ে আটটি শাখায় বিস্তৃত হয়েছে। তবুও, এই আমিষ-প্রেমীর দেশে, একটি নিরামিষ রেস্টুরেন্ট খোলার ধারণাকে সফল করা নেহাতই সহজ ছিল না, কিন্তু হিল্টল এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।  

         জুরিখের মানুষদের কাছে জার্মান-প্রভাবিত খাবার সর্বদা হৃদয়গ্রাহী ছিল, যেখানে কিন্তু মাংসের চাহিদাই ছিল সবচেয়ে বেশী। উনিশ শতকের শেষভাগে যখন রেস্টুরেন্টটি খোলা হয়, তখন সুইশ অভিজাতরা নিরামিষভোজীদের প্রায়ই 'হার্বিভোরাস' এবং 'গ্রেজার্স' বলে বিদ্রুপ করত। ১২০ বছরে পুরানো এই রেস্টুরেন্টটি “ভেজিটারিইয়ার হেইম ও অ্যাবস্টিনেন্‌জ ক্যাফে” নামে তার যাত্রা শুরু করে ।

এই বিষয়ে রয়েছে একটি মজার গল্প। এই রেস্তোরাঁর প্রথম মালিক অর্থাৎ অ্যাম্ব্রোসিয়াস হিল্টল যিনি একসময় ছিলেন আমিষভোজী। ডাক্তারের পরামর্শে তাঁকে মাংস ছাড়তে হয়, তাই নিরামিষ খাবারের তাগিদেই তিনি একদিন উপস্থিত হন তখনকার জুরিখের একমাত্র নিরামিষ হোটেল যেখানে রান্না করতেন মারথা নিউপেল। শুধু যে তাঁর হাতের রান্নায় মনোমুগ্ধ হয়েছিলেন অ্যাম্ব্রোসিয়াস তা নয়, রাঁধুনিকেও তাঁর ভাল লাগে। পরে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তারপরেই এই হোটেলের মালিক হন অ্যাম্ব্রোসিয়াস হিল্টল এবং এটিকে আরও বড় করে তৈরি করেন তিনি এবং নাম পরিবর্তিত হয়ে রাখা হয় হাউস হিল্টল। ১৯৭৩ সালে এটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং নাম দেওয়া হয় হিল্টল-ভেজি”

        এখানকার খাবারের মূল্য মোটামুটি সি.এইচ.এফ ২১-৪০ হয়ে থাকে, ভারতীয় মূল্য অনুযায়ী যা হয় প্রায় ১৪৭৫-২৮০৮ টাকা। বুফেতে খাবারের দাম তুলনামূলক কম, এখানে প্লেটের ওজন হিসাবে মূল্য ধার্য করা হয়।

(ভারতীয় খাবার)

(ফ্রুট স্যালাড)

(ইতালিয়ান ডিশ)

ডিজিটাল মাধ্যমের ট্রেন্ড ভারতে নতুন বলে মনে হলেও বিগত ২০ বছর ধরেই কিন্তু এখানে সমস্ত অর্ডার নেওয়া হয় ডিজিটালি। আরও একটি মজার বিষয় হল এই যে এখানে কিন্তু ভারতীয় অনেক রেসিপি-ই মেনুতে রাখা হয়েছে এবং এমন অনেক শেফও রয়েছে যাঁরা ভারতীয়। এটির বর্তমান মালিক হল রোলফ হিল্টল, ২০১২ সালে এটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অ্যাওয়ার্ড পায় পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন রেস্টুরেন্ট হিসাবে। বর্তমানে হিল্টল অ্যাকাডেমি-ও খোলা হয়েছে যেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর এভাবেই স্বমহিমায় আজও একইভাবে বর্তমান হাউস হিল্টল।

 

    

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...