ফলের দেশে বেশ নামডাক রয়েছে আপেলের। বাচ্চা থেকে বয়স্ক আপেলের প্রেমে মোটামুটি সবাই মাতোয়ারা। গুণের দিক থেকেও ভক্তদের নিরাশ করেনা আপেল। তার শরীরে উপস্থিত নানা পুষ্টিগুণ সে ঢেলে দেয় তার ভক্তের শরীরে। কিন্তু শুধুই কি উপকারই করে আপেল? নাকি তার সাথে সাথে শরীরে নানা অপকারের জন্যেও দায়ী থাকে সে।
প্রথমে আসা যাক আপেলের গুণের কথায়। বিভিন্ন ডাক্তারের কথা মত আপেল শরীরের পক্ষে উপকারী হিসেবে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিদিন আপেল খেলে শরীরে নানা অসুখের সাথে ক্যান্সারের প্রবণতাও কমে আসে। নিয়মিত আপেল খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ২৮ শতাংশ কমে। আপেলে উপস্থিত ফাইবার রক্তে শর্করার ভারসাম্য ঠিক রাখে। এগুলি সব প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফলানো আপেলের গুণাবলী।
এবার আসা যাক, আপেলের অপকারী ভূমিকার দিকে। আপেলের ফলন অত্যধিক বৃদ্ধি করার জন্য গাছে দেওয়া হচ্ছে প্রচুর কীটনাশক ও সার। সম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, অন্য ফলের তুলনায় সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহৃত হয় আপেলে। সেই কীটনাশক ধোয়ার পরেও ফলের গা থেকে যায় না। ফলের সাথেই সেই কীটনাশক শরীরে প্রবেশ করে বিষক্রিয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আপেলকে তরতাজা দেখতে আপেলের গায়ে দেওয়া হয় মোমের প্রলেপ। তাই কারোর যদি অ্যালাৰ্জির সমস্যা থাকে তার উচিত আপেল থেকে একটু দূরে থাকা। আপেলে থাকা মোমের থেকে গলা খুসখুস করা, হালকা কাশি, গলায় অস্বস্তি প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া যে বিষয়টি নিয়ে আমরা মোটামুটি সকলেই অল্পবিস্তর সচেতন তা হলো আপেলের বীজ আমাদের শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। আপেলের বীজ পেটে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ার পাশাপাশি মৃত্যুও ঘটতে পারে। কিন্তু অনেকসময় আমরা খেয়াল না করেই একটা বা দুটো বীজ খেয়ে ফেলি। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী কোনো ক্ষতি না হলেও তৎক্ষণাৎ মাথা ঘোরা, বমিভাব, হঠাৎ ক্লান্তি প্রভৃতি নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে বেশ কয়েকটা আপেলের বীজ একসাথে চিবিয়ে খেলে শরীরে ভয়ানক বিষক্রিয়া হবে। আপেলের দানায় উপস্থিত অ্যামিগডালিন শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে বাধাদান করে ফলে মস্তিষ্কে সঠিক পরিমান অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না এবং তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর মুখে ঢোলে পড়তে হয়
তবে আমরা চাইলেই এই বিপদগুলি থেকে দূরে থাকতে পারি। প্রতিবার বাজার থেকে আপেল কিনে আনার পর তা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে ধুয়ে তবেই নিজে খান ও বাড়ির শিশুকে খাওয়ান। আপেলের গা থেকে মোম তোলার জন্য আপেলকে ফুটন্ত গরম জলে মিনিটখানেক রেখে তুলে একটি খসখসে কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। বাজারে আপেল কেনার সময়ে খেয়াল করবেন সেই আপেল যেন বেশি চকচক না করে। অত্যধিক চকচক করলে বুঝতে হবে আপেলটি মোমের জামা অবশ্যই পরে আছে। তাই আপেল খানার সময়েই সাবধান হন। ভালো করে আপেল ধুয়ে দরকার পারলে তার খোসা ছাড়িয়েও আপনি সেই আপেল খেতে পারেন। কেটে খেলে দানা পেটে যাওয়ার ভয় থাকে না। সত্যিই আপেল খুবই উপকারী ফল। তাই এই দিকগুলি খতিয়ে দেখুন, সঠিক পদক্ষেপ নিন এবং নিরাপদে আপেল খান।