ভারতীয় ফুটবল হোক ‘সুনীল’ময়

আজকের দিনে সেকেন্দ্রাবাদে এক পাহাড়ি বংশজাত শিশুর জন্ম হয়েছিল, যিনি ভারতীয় ফুটবলের নকশাই বদলে দেয় তিনি ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী 

২০০২ সালে সুনীল তার ফুটবল কেরিয়ার শুরু করেন মোহনবাগানের হয়ে বছর খেলে তিনি ১৮ ম্যাচে গোল করেছিলেন। কলকাতা ময়দানে পাহাড়প্রমাণ চাপের মধ্যেও তার শীতলতা দেখে অবাক হয়েছিল অনেকেই। ২০০৫ সালে জেসিটিতে গিয়ে তিনি ফুল ফোটাতে শুরু করলেন। মরশুমে ২১টি গোল করে তখন সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। আইএম বিজয়ন এর যোগ্য উত্তরসূরী ভাবা হয়েছিল তাকে। 

২০০৫ সালের দুর্দান্ত মরশুমের পরই তিনি জাতীয় দলে সুযোগ পান। প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গোল করে জাতীয় নায়ক বনে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর কেরিয়ারে ,,তাকে ফিরে তাকাতে হয় নি ২০০৮-২০০৯ মরশুমে ইস্টবেঙ্গল তার পরের মরশুমে ডেম্পোতে মোট ১৭টি গোল করে একপ্রকার সুপারস্টার বনে গিয়েছিলেন তিনি। আর তারপরই এল এক ফোন কল, সুদূর ইংল্যান্ড থেকে। ঐতিহ্যশালী ক্লাব কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স তাকে সই করতে আগ্রহ প্রকাশ করে ২০০৯ সালে একটি সর্বভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, বছরের চুক্তি সইও করে ফেলেছিলেন এই ভারতীয় স্ট্রাইকার। ইতিহাস তৈরি করার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ছিল ২৫ বছরের তারকা। কিন্তু এক অদ্ভুত নিয়মে তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হয়। কারণ ব্রিটিশ প্রশাসনের তখনকার নিয়ম অনুযায়ী প্রিমিয়ার লিগের কোনও বিদেশী খেলোয়াড়কে ওয়ার্ক পারমিট পেতে গেলে তার দেশকে অবশ্যই ফিফা ব়্যাঙ্কিংয়ে ৭০ এর কম থাকতে হবে। আর তাতে জেদ চেপে যায় সুনীলের। শপথ নিয়েছিল সে, ভারতবর্ষের ফুটবলের নকশা বদলে দেবেন তিনি।

এরপর আবার তিনি ফিরে আসেন পুরোনো ক্লাব মোহনবাগানে। কিন্তু ক্লাবের অন্তর্দ্বন্দ্বে খুশি হতে পারেননি সুনীল, তাই পরের মরশুমেই চলে আসেন চিরাগ ইউনাইটেডে তবে তার ক্লাব কেরিয়ারের সেরা মুহুর্ত নিঃসন্দেহে বেঙ্গালুরু এফসিতে সই করা। ২টি আইলিগ, ১টি আইএসএল খেতাব, ২টি ফেডারেশন কাপজীবনের সেরা সময়তে তার সঙ্গী এই বেঙ্গালুরু এফসি। 

কিন্তু ক্লাব ফুটবলে ফুল ফোটালেও তার আসল লক্ষ্য ছিল নিজের দেশকে সর্বোচ্চ আসনে বসানো। ২০০৭ নেহরু কাপে দুর্দান্ত খেলে প্রায় ১০ বছর পর দেশকে আন্তর্জাতিক সাফল্য এনে দেন তিনি। এরপর ২০০৮ এর এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ জয়, যেখানে হিট হয়েছিল বাইচুং-সুনীল যুগলবন্দী। আর এই জয়ের ফলে ভারত সুযোগ পেল এশিয়া কাপে। কিন্তু গ্রুপ পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া বাহরিনের কাছে হার সত্ত্বেও সকলে প্রশংসায় ছিল সুনীলের পারফর্মেন্সে। ২টি গোল করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন এশীয় ফুটবল মহলকে। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে সাফল্য এলেও আসছে না কোনও উৎসাহ। আসলে মাঠে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে থাকে দর্শকেরা, যাদের উপস্থিতিতে একপ্রকারঅ্যাড্রিনালিন রাশবেড়ে যায় খেলোয়াড়দের, তারাই তো নেই। ২০১৮ এর ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের মাঝেই তিনি ভিডিও বার্তায় দর্শকদের অনুরোধ করেন ফুটবল মাঠে আসার জন্য, সমর্থন করার জন্য। আর তাতেই যেন এক অন্যরকম আগুন জ্বলে উঠল ভারতীয় ক্রীড়া মহলে। হাজারে হাজারে দর্শক মাঠে এসে চিৎকার করে চলেছে ভারতের নামে, যা দেখে যে কেউ অবাক হবেই অবাক হওয়ারই কথা, ধারণাটাই বদলে দিয়েছেন সুনীল। আর এই সমর্থকদের চরম উচ্ছ্বাসেই যেন ভারতীয় দলের খেলার ধরণই বদলে গেল। আল্ট্রা ডিফেন্সিভ থেকে একেবারে সুপার অ্যাটাকিং হয়ে গেল ভারতীয় দল। যার দরুণ ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জয় এবং ২০১৯ সালের এশিয়া কাপে আবারও সুযোগ পেল ভারতীয় দল।

দর্শকদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি বিশ্ব ফুটবলে ভারতকে গর্বের জায়গায় এনেছেন আমাদের অধিনায়ক সুনীল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৭১ গোল করে এই মুহুর্তে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের মধ্যে নম্বরে আছেন তিনি। তার থেকে কম গোল রয়েছে আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি-, আর তার ঠিক উপরে আছেন পর্তুগালের মসিহা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। আমাদের অধিনায়ক, আমাদের প্রেরণা সুনীল ছেত্রীকে জিয়ো বাংলার তরফ থেকে ৩৪তম জন্মদিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা অভিন্দন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...