স্কট স্টাইরিস বলেছিলেন 'এই মেয়েটি মহিলা ক্রিকেটের বিরাট কোহলি'। ভুল তো বলেননি। দুজনেই মুম্বই নিবাসী। একজন আদি, অপরজন সদ্য। দুজনের জার্সি নম্বরই ১৮। শুধু এই জন্যই কী একজনকে বিরাট কোহলির সঙ্গে তুলনা করা যায়? না, করা যায় না বটে। ওঁর ব্যাটিং ওঁকে সেই জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। তিনি ভারতীয় পুরুষের ক্রাশ স্মৃতি মন্ধনা।
ভাই শ্রাবণের সঙ্গে ক্রিকেটটা একসঙ্গেই শুরু করেছিলেন। তারপর কখন যে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন বোঝা যায়নি। না হলে নয় বছর বয়সে মহারাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব-১৫ পর্যায়ের দলে খেলার জন্য মনোনীত হওয়া কি সহজ বিষয়! এগারো বছর বয়সেই মনোনীত হন মহারাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের দলে খেলার জন্য।
২০ এপ্রিল, ২০১৩। বাংলাদেশের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক হয় স্মৃতির। ৫ এপ্রিল, টি-২০তে অভিষেক হয়। তারপর থেকে শুধুই এগিয়ে চলা। পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ব্যাট তার হয়েই সবসময় কথা বলেছে।
ওয়ান ডে-তে রান তাড়া করতে নেমে টানা দশটি অর্ধশতরানের বিরল নজির রয়েছে স্মৃতির। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভদোদরার ওয়ান ডে ম্যাচে পরে ব্যাট করে ৭১ বলে ৬৭ রান করেছিলেন মন্ধনা। এই ইনিংসের পর থেকেই পরে ব্যাট করে পরপর দশটি ৫০ বা তারও বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, নভজ্যোত সিংহ সিধু, বিরাট কোহলিদের পিছনে ফেলে দেওয়া আরও একটি রেকর্ড রয়েছে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের এই স্টাইলিশ ওপেনারের। ভারতীয়দের মধ্যে একদিনের আন্তর্জাতিকে দ্বিতীয় দ্রুততম ২,০০০ রানের নজির গড়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য ভারতের হয়ে এখনও পর্যন্ত ৫৯টি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলে ২২৫৩ রান করেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে চারটি শতরানের ইনিংস। গড় ৪১.৭। একমাত্র ভারতীয় মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে ২০১৬ সালে আইসিসির বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটার হয়েছিলেন। এবার বলুন তো কেন তাঁকে বিরাটের সঙ্গে তুলনা করা হবে না?
আবার ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বাঁ-হাতি ওপেনার স্মৃতি মান্ধানার ব্যাটিং করার ধরন এবং ফুটওয়ার্ক অনেকটা মেলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তা মেনে নিয়েছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও। স্মৃতির ড্রাইভ, ব্যাকফুট পাঞ্চ, স্কোয়ার কাট দেখে মনে হয় যেন অবিকল সৌরভ।
বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেটের জগতে ‘ন্যাশনাল ক্রাশ’ স্মৃতি মন্ধনা। তিনি কোনো অভিনেত্রীর চেয়ে কম নন। একদিকে ব্যাট হাতে যেমন মাঠের মধ্যে ঝড় তুলতে পারেন ঠিক তেমনই তরুণ-যুবকদের হৃদয়েও ঝড় তোলেন।
২৫ বছর বয়সী মহিলা ক্রিকেটার জন্ম মুম্বইয়ে। ১৮ জুলাই, ১৯৯৬ তারিখে মন্ধনা’র জন্ম। স্মিতা ও শ্রীনিবাস মন্ধনা দম্পতির সন্তান তিনি। দুই বছর বয়সে সাংলি থেকে মহারাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয় তার পরিবার। ছেলে ও মেয়েকে ক্রিকেটার বানাবেন এই ছিল বাবার স্বপ্ন। স্মৃতি বাবার স্বপ্ন পূরণ করে দেখিয়েছেন।