রেড কার্পেটে হেঁটে যাচ্ছেন এক কৃষ্ণকলি। অঙ্গে রক্তবর্ণ দক্ষিণী শাড়ী, কণ্ঠে শ্বেত মুক্তোর কণ্ঠহার, কপালে লাল কুমকুম, আর দীঘল কালো চোখ। চোখ টেনে নেয় তার মুক্তোর সিঁথিখানা। খোঁপার সাদাফুলে যেন কিন্নরী।
কান উৎসবে হাজার-গাউন আর অফশোল্ডের ভিড়কে হাজার যোজন পিছনে ফেলে সমস্ত ফ্ল্যাশলাইট, ভারত থেকে আগত এই কৃষ্ণাসুন্দরীর দিকেই!
নাম তার নন্দিতা। নন্দিতা দাস।
তিনি চিরকালই অন্যরকম। প্রথাভাঙা। ভালোবাসেন বিরুদ্ধ স্রোতে চলতে। রেখে-ঢেকে বা পিঠ বাঁচিয়ে কথা বলা তাঁর ধাতে নেই। তাঁর স্পষ্ট কথা চাবুকের মতো। অকপট।দ্বিধাহীন।
নাম শুনে অনেকে বাঙালি ভাবলেও আসলে উড়িষ্যার মানুষ। বাবা যতীন দাস নামকরা চিত্রশিল্পী। মা লেখিকা।
নন্দিতার বড় হয়ে ওঠাটা শুরু থেকেই তাই অন্যরকম। চিন্তা-চেতনা-ভাবনায় নিজস্বতাবোধের ছাপ। ব্যক্তিগত ভাবনা প্রভাব ফেলেছে অভিনয়জীবনকেও।
অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন মীরা নায়ারের ‘ফায়ার’ ছবি দিয়ে। ছবির অন্যতম প্রধান মুখ। পরবর্তী সময়ে আর্থ, বাওয়ানদার, বিফোর দ্য রেনস-এর মতো ছবি।
প্রতি ছবিতেই তিনি অন্যরকম।
প্রথাগত ‘সিনেমা-মুখ’ না হওয়াতে গ্ল্যামার দুনিয়ায় বাধা কম আসেনি। কিন্তু শুরু থেকেই নিজের অভিনয়ে ‘মেধা’ শব্দটিকে জুড়ে নিয়েছিলেন নন্দিতা, তাই লড়াই থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই আসেনি কোনওদিন।
শুধুমাত্র অভিনেত্রী হিসেবে তাঁকে দর্শকরা চেনে না বরং তিনি অনেক বেশি ‘ পরিচালক’, ‘চিত্রনাট্যকার’, ‘ মানবাধিকারকর্মী’।
ফেয়ারনেস ক্রিমের ‘বর্ণবিদ্বেষ’ নিয়ে তিনি আন্দোলন করেছেন। রং-বিদ্বেষে’র বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করেন ‘ডার্ক ইস বিউটিফুল’। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তিনি। ১.৩ বিলিয়ন মানুষ কণ্ঠ মিলিয়েছিল নন্দিতার সঙ্গে। ২০০৯ সালে ফ্রান্স সরকার তাঁকে ‘ নাইট অফ দ্য অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস’ সম্মান দেয়। প্রকাশ করা হয় ডাকটিকিট।