রাতারাতি হার্টথ্রব। একেবারে ঝড় বইয়ে দিয়ে। সেই টানেই টানা ৫০ সপ্তাহ প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল! সময়টা ১৯৮৮। হিন্দি ছবির আকাশে জ্বলজ্বলে হয়ে দেখা দিল আনকোরা এক তারকা জুটি। তাদের অনস্ক্রিন রোম্যান্স দর্শকদের শুধু মুগ্ধ করল না। বলা যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেল। আশির দশকের বিগেস্ট হিট হিসেবে বলিউডের ব্লকব্লাস্টার লিস্টে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিল ‘কায়ামত সে কায়ামত তক’। জুটির নাম জুহি-আমার। এক ছবিতেই স্টার।
নাসির হুসেন প্রোডাকশনের ছবি। পরিচালক মনসুর খান। নতুন মুখে বাজি ধরেছিলেন। চেনা নাম বলতে শুধু উদিত নারায়ণ আর অলকা ইয়াগনিক। মিউজিক্যালিও হিট হয়েছিল ছবি।
‘কায়ামত সে কায়ামত তক’ হিট ছবি হিসেবে ঘোষণা করার পর দিল্লি, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ সফর করেছিল ছবির টিম। প্রেক্ষাগৃহে ছবির বিরতির সময় দর্শকদের সামনে আসতেন তাঁরা। দর্শকদের উচ্ছ্বাস বাঁধ মানত না। দাবি উঠত আর একটু থেকে যাওয়ার। একবার তো সেই দাবি এমন জোরালো হয়েছিল যে গাড়িতে ইট পর্যন্ত উড়ে এসেছিল। এভাবেই জন্ম হয়েছিল নতুন তারকার।
শুরু থেকেই নিজের কাজ নিয়ে খুঁতখুঁতে ছিলেন আমির। তাঁর সেই গুণই তাঁকে তারকা পথের পথিক করেছিল। স্ক্রিপ্ট, রোল থেকে শুরু করে ছবি তৈরির সব কিছুতেই তাঁর চুলচেরা নজর। কোথাও এতটুকু ‘ভুল’ হওয়ার জো নেই। ‘পারফেকশনে’র খিদে তাঁকে করে তুলেছে অন্যরকম সুপারস্টার। তাঁকে বলা হয় ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’! দ্য ওয়ান অ্যান্ড ওনলি আমির খান।
ডেবিউ হয়েছিল আট বছর বয়সে। ছবির নাম ইয়াদোঁ কী বারাত’। ধর্মেন্দ্র, নিতু সিং, জিনাত আমনের মতো স্টারদের সঙ্গে। এহেন আমিরের কিন্তু প্রথম ভালবাসা লন টেনিস। মহারাষ্ট্রের রাজ্যস্তরে চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার!
এত বছরের বলিউড কেরিয়ারে আমিরকে কখনও কোনও অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে দেখা যায়নি। বলিউডের অন্দরমহলে ছবি আর পুরস্কার নিয়ে যে রাজনীতি চলে তা থেকে হাজার ক্রোশ দূরে থাকতেই এই সিদ্ধান্ত। ১৯৯০-তে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সানি দেওলের কাছে হারতে হয়, তারপর থেকেই আর সব ধরনের পুরস্কারের মঞ্চ থেকে দূরে তিনি। তবে পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ গ্রহণ করেছেন।
দেশপ্রেমের সিনেমায় বারবার দেখা গিয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন দেশবোধের স্ক্রিপ্টের প্রতি তাঁর আলাদা টান। বিপ্লবী আবুল কালাম আজাদের বংশধর। তাঁর ভাবনা থেকে অনুপ্রেরণা পান ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। স্বভাব পড়ুয়া আমির অ্যালফ্রেড হিচককের সিরিজ খুব ভালোবাসেন।
আমিরের পুরো নাম আমির হুসেন খান। আর ডাকনাম ‘কানহাইয়ালাল’। এমন নামকরণের পিছনে কারণটা কিন্তু খুব মজার। ছোটবেলায় স্কুলে বন্ধুর চেয়ে অনেক বেশি ঘিরে থাকত বান্ধবীরা। নার্সারি ক্লাসেই ছেলের এমন জনপ্রিয়তা দেখে বাবা-মা তাঁকে ডাকতেন ‘কানহাইয়ালাল’ বলে।
কাজ আমিরের ‘অবসেশন’। সেই অবসেশন এমনই যে নিজেকে ভুলতে হয়। ভুলতে হয় চারপাশ। হয়ত বা আত্মীয়-বন্ধু-পরিজন। পথ চলতে গিয়ে হারাতে হয় প্রিয়জন। দূরত্ব বাড়ে। কিন্তু আমির বদলান না। থেকে যান একই। তিনি যে মিস্টার পারফেকশনিস্ট!