শয়তান'-এ মাধবনের দুর্দান্ত অভিনয় সাড়া ফেলেছে তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে। চার্মিং হাসি আর উইটি চোখ। নজর আটকে যেত সেখানেই। দেখলেই মনে হয় কলেজে ঠিক আমার পাশের সিটটাতেই যেন বসে রোজ। যাওয়ার পথে একেই তো দেখি রোজ বাসস্টপে। দূর হোস্টেল থেকে যেন সবে পাড়ায় ফিরেছে!
ঝরঝরে তরতরে এক মুখ। ম্যানারিজমের বাড়াবাড়ি নেই, ভীষন সোজাসাপ্টা। এই দেখা দিয়েই ঝড় তুলেছিলেন নব্বই দশকে।
ম্যাডি ম্যাডি চিৎকার!
বলিউডে তাঁর প্রবেশ অবশ্য অনেকটা চকলেট হিরো হয়েই। কিন্তু পাশের বাড়ির টান এড়াবে কী করে ভারতীয় দর্শক!
ম্যাডির নামে পাগল হল মানুষ। সেই ক্রেজ আজও চলছে।
ম্যাডি। পুরো নাম আর মাধবন। রঙ্গনাথন মাধবন।
জন্ম জামশেদপুরে। তামিল ব্রাহ্মণ পরিবার। পড়াশোনাই দিন রাতের শ্বাসবায়ু এই পরিবারের। বাবা মা দুজনেই চাকুরিজীবী। বাবা রঙ্গনাথন ছিলেন টাটা স্টিলের একজন ম্যানেজমেন্ট এক্সিকিউটিভ এবং মা সরোজা ছিলেন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ম্যানেজার। স্কুল জীবনও কেটেছে বিহারের শিল্পশহরেই।
ছোটবেলা থেকেই মাধবন অন্যরকম। পড়াশোনা ছাড়াও অন্য নানা বিষয় তাকে টানত। কলেজে পড়তে পড়তে ভেবেছিলেন আর্মিতে যাবেন। ট্রেনিংও শেষ করেছিলেন। মহারাষ্ট্রের হয়ে এনসিসি ক্যাডার হিসেবে ইংল্যান্ড যান।
১৯৮৮-তে রাজারাম স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। ভারতের কালচারাল এম্বাসাডর হয়ে কানাডা।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ার সময় থেকে মাধবন মোটিভেশনাল স্পিকার। ছাত্রছাত্রীদের ওয়ার্কশপ করতেন। সেভাবেই দেখা হয় যায় তাঁর জীবনের প্রথম প্রেমের সঙ্গে। পরে জীবনসঙ্গীও সাঁঝতারার মতো সেই মেয়েটি।
১৯৯২-তে জাপান গেলেন। টোকিওতে ইয়ং বিজনেস কনফারেন্সে বক্তব্য রাখলেন। সেবার পাবলিক স্পিকিং-এ চ্যাম্পিয়ন তিনিই।
ভাষার প্রতি আগ্রহ ছিল ছোট থেকে। নিজের মাতৃভাষা তামিল। এছাড়াও সাত সাতটা ভাষা বলতে পারেন জলের মতো। সাত ভাষাতেই সিনেমা করেন। পাবলিক পারফরম্যান্সও করেন নিয়মিত।
প্রথম পর্দায় আসা ১৯৯৬-এ। কন্নড় কমার্শিয়ালে। ১৯৯৮-এ কন্নড় ছবিতে ডেবিউ। ২০০১-এ বলিউড। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। বলিউড আর কলিউড দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই তিনি ব্যস্ত তারকা।
ছবির দুনিয়া আর তাঁর নিজের অন্য ভুবন কোনদিনই জট পাকিয়ে যায়নি। পুরোদস্তুর ‘ভেজিটেরিয়ান’। পশুপ্রেমী সংস্থা পেটার অত্যন্ত সক্রিয় সদস্য। ব্যস্ত থাকেন নিজের চ্যারিটেবল ওয়ার্ক নিয়ে। গলফ খেলতে ভালবাসেন।
মাধবনের নামে জনপ্রিয় ভিডিয়ো গেম ক্যারেক্টারও আছে দুটি।
বাইরে থেকে বোঝা যায় না কতটা বহুমাত্রিক মানুষ। নিজের ভাবনা, কথা আর জীবনযাপনকে কখনও আলাদা আলাদা করে ভাবেননি। শুরু থেকেই সব এক। তাই যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে সেই পথেই এগিয়েছেন কেরিয়ার থেকে জীবন সব জায়গাতেই। তাঁর অস্ত্র ছিল মেধা আর ধীরস্থির মন। সেই দিয়েই করেছেন লক্ষ্যভেদ।
ভারতীয় দর্শকদের খুব প্রিয় ম্যাডির আজ জন্মদিন। ৫৩ বসন্ত পেরিয়ে এলেন। আজ তাঁর জন্মদিন। ১৯৭০-এর আজকের দিনেই জামশেদ পুরে তাঁর জন্ম হয়।