পঁয়তাল্লিশে অপরাজেয়!
প্রথম ছবিতেই আকাশ ছোঁয়া সাফল্য। আসমুদ্র হিমাচল কাঁপিয়ে মিলেছিল ‘গ্রিক গড’-এর উপাধি। কতটা সহজ ছিল সেই যাত্রা?
নীল চোখ। তীক্ষ্ণ নাক। কাটা-কাটা মুখের আদল। সমুদ্রের তীর ধরে ছুটে চলেছেন। অনাবিল হাসির উচ্ছ্বাসে প্রথম প্রেমের বেপরোয়া আহ্বান, ‘ কহো না প্যার হ্যায়’। সারা ভারত টলে গিয়েছিল। বিশেষ করে আট থেকে আশির মহিলারা। বলার আর অপেক্ষা রাখে না ইনি কে। আর কেউ নন, তিনি হৃত্বিক রোশন। আজ দেশে- বিদেশে লাখো লাখো ভক্তকূল তাদের ঈশ্বরের জন্মদিন পালন করতে ব্যস্ত।
কিন্তু এত ভালবাসা আর সম্মান কুড়োবার জন্য স্বয়ং ঈশ্বরকেও ঘাম ঝরাতে হয়েছে।
বাবা রাকেশ রোশনের হোম প্রোডাকশন এর ব্যানারে ছবির হাত ধরে প্রথম লাইট- ক্যামেরা- অ্যাকশন- এর জগতে আসা। শিশু অভিনেতা হয়ে দেখা গিয়েছিল ‘ ভগওয়ান দাদা’য়। পরে কিছু ছবিতে পরিচালক বাবাকে অ্যাসিস্ট করেছেন ক্যামেরার পিছনে।
২০০০ সালে প্রথম নায়কের ভূমিকায়। হোম ব্যানারের ছবি কহো না প্যার হ্যায়। শুরুতেই অবশ্য সুযোগ আসেনি। অভিনয় করার কথা ছিল শাহরুখ খানে। কিন্তু ডেটের সমস্যায় ‘হিরো’ বদলের ভাবনা আসে। পরিচালক- প্রযোজক বাবাও খুঁজছিলেন নতুন মুখ। অগত্যা কাকার কথায় লুক টেস্ট হল নায়কের- হয়ে গেলেন রাতারাতি স্বপ্নের নায়ক, দেশের হার্ট থ্রব। বাকি সাফল্য আজ ইতিহাস। তিনিই প্রথম অভিনেতা হিসেবে একই বছর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান।
২০০৯ এ সুপারস্টার তাঁর এক সাক্ষাৎকারে প্রথম প্রকাশ করেন নিজের কথা বলার সমস্যার ব্যাপারে।প্রথম ছবির আগে তাঁকে রীতিমত স্পীচ থেরাপির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। এই অভ্যেস তাঁকে আজও নাকি অব্যাহত রাখতে হয়েছে। কথায় কথায় নিজেকে স্পেশাল চাইল্ডও বলেছিলেন দেশের এই ডান্সিং আইকন।
২০০৫ সালে হোম প্রোডাকশন ‘কৃশ’ ছবির শ্যুটিং- এর সময় এক দুর্ঘটনায় চোট পান পায়ে। ডাক্তাররা বলেছিলেন, তিনি আর কখনো স্টেজে নাচতে সক্ষম হবেন না। সেই বাঁধা কেও তুড়িয়ে উড়িয়ে আজও মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন এই গড অফ ড্যান্স। ক সময় অবসাদেও ভুগেছেন বলিউড তারকা হৃতিক রোশন।
সম্প্রতি নিজের মুক্তি প্রাপ্ত ছবি ওয়ার এর ঘুঙরু গানটিতে তাঁর সিগনেচার স্টেপের আগুনে সারা দুনিয়া আর সোশ্যাল মিডিয়া উত্তপ্ত।
২০০৩ এ এক একটি ম্যাগাজিন পরপর ৭ টি ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ার জন্য হৃত্বিক কে ওয়ান হিট ওয়ান্ডার এর তকমা এঁটে দেন। কিন্তু আজ সেই ম্যাগাজিন বেপাত্তা হলেও, নিজের ঝলকে বিদ্যুৎ নিয়ে ফিরেছেন সুপার হিরো। মহেঞ্জোদারো ছবিটির মুখ থুবড়ে পড়া, স্ত্রী সুজানের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ, কঙ্গনা রানাওয়াত সঙ্গে বিতর্ক- অপ্রাপ্তির ঝুলি পূর্ণ করেনা নিজের ভাঁড়ার। সম্প্রতি বাবা রাকেশেও ক্যান্সার এর ভয়কে কাটিয়ে উঠেছেন।
বর্তমান সময় তুলনামূলক ভালো ভাবে ভালর মধ্যে দিয়েই কাটছে। আগামীদিনেও আমরা আশা রাখতে পারি অনেক ভালো কিছুই ওনার জন্য অপেক্ষা করে আছে- আরও প্রাপ্তি, আরও সম্মান ও ঐশ্বর্য।