সত্যজিৎ সান্নিধ্যে দীপঙ্কর

কেরিয়ার শুরু করেছিলেন অ্যাড এজেন্সিতে। জুনিয়র এক্সিকিউটিভ। একবার অভিনয় করলেন অফিসের নাটকে। সহকর্মী আর দর্শকদের খুব ভাল লাগল সেই অভিনয়। সকলে পরামর্শ দিল সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করতে।সত্যজিৎ তখন তাঁর কলকাতা ট্রিলজির কাজে ব্যস্ত। পরিকল্পনা চলছে 'সীমাবদ্ধ' নিয়ে।

একদিন টেলিফোন ডিরেকটারি ঘেঁটে বের করে ফেললেন বিশপ লেফ্রয় রোডের নম্বরখানা। রিং হতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলেন সেই বিখ্যাত গলা। নিজের পরিচয় দিয়ে জানালেন,
শুনেছেন সত্যজিৎ 'সীমাবদ্ধ'র জন্য নির্বাচন করছেন, যদি কোনও সুযোগ থাকে...
সত্যজিৎ জানালেন সব চরিত্র ঠিক হয়ে গিয়েছে।

Dipankar1

সেই জুনিয়র এক্সিকিউটিভ অনুরোধ করলেন তিনি একবার দেখা করতে চান। এমনিই। পরের দিন আসতে বললেন বাড়িতে। এ যেন স্বপ্ন। একেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে পৌঁছে গেলেন।

সেই বিখ্যাত বাড়ি। বিখ্যাত ঘর। আর সমুখে বিখ্যাত মানুষটি। অ্যাড এজেন্সি শুনে কমার্শিয়াল আর্টের বদলে যাওয়া দস্তুর নিয়ে আড্ডা চলল অনেকক্ষণ। কিন্তু ছবি নিয়ে সেখানে একটা কথাও নেই। সময় যখন প্রায় শেষ তখন সত্যজিৎ বললেন, "একটা খুবই ছোট চরিত্র আছে, তিনি কি করতে রাজি হবেন?"

আগন্তুক মুগ্ধ! অভিভূত! হাতে যেন চাঁদ নেমে এসেছে!

সীমাবদ্ধ'তে অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিতের সঙ্গে আরও চারটি ছবি করেছেন। 'জনঅরণ্য', 'শাখা-প্রশাখা', 'গণশত্রু', 'আগন্তুক'।
সত্যজিতের শেষ ছবি 'আগন্তুক'-এ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
এড এজেন্সির সেই তরুণ এক্সিকিউটিভের নাম দীপঙ্কর দে।

Dipankar2

বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন তখন তবু প্রথমবার সত্যজিতের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে থরথরিয়ে কেঁপেছিলেন 'সীমাবদ্ধ'র সেটে।
আর্ট এবং কমার্শিয়াল দুই ধরনের ছবিতেই অভিনয় করেছেন পাল্লা দিয়ে। চরিত্রাভিনেতা। নায়ক। ভিলেন। সব রকম হয়েছেন। কাজ করেছেন সব পর্দায়। সত্যজিৎ থেকে ঋতুপর্ণ সকলের কাছেই হয়ে উঠেছেন গুরুত্বপূর্ণ। আজও বাংলা ছবির অন্যতম প্রবীণ মুখ তিনি। তাঁর অভিনয় জীবনের যাত্রাপথ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের দলিল।

আজ তাঁর জন্মদিন। ১৯৪৪-এর আজকের দিনে ঝাড়খন্ডের জামশেদপুরে তাঁর জন্ম হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...