২০০ টাকা মাইনের চাকুরে থেকে ব্লকবাস্টার ‘বীরু’

টানটান চেহারায় পঞ্জাবের মাটির গন্ধ।  গলার স্বর, পুরুষালি আবেদন অন্য অভিনেতাদের ভিড়ে আলাদা করে চোখ টেনে নেয়। বলিউডে তিনি 'পাজি'। ধর্মেন্দ্র সিং দেওল। দর্শকমুখে ধর্মেন্দ্র।

বলিউডে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন দুধর্ষ ফিজিক আর অভিনয় দিয়ে। এক সময় তাঁকে বলা হত হিন্দি সিনেমার 'হি-ম্যান'। মেইনস্ট্রিম কমার্শিয়াল ছবিতেও যেমন আছেন, আবার অন্য ধারার ছবিতেও চোখ টেনেছেন পরিমিত অভিনয় দিয়ে।

dharmendra-1

 

"আনন্দ" ছবি দেখে সরাসরি ফোন করেছিলেন পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়কে। অভিনয় করতে চান তাঁর ছবিতে। পরে হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে কাজও করেন। ছবির নাম ‘সত্যকাম’। ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬৯ সালে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে একা লড়ে যাওয়া এক পুলিশ অফিসার সত্যপ্রিয় আচার্য। বলিউডে মারকুটে নায়ক হিসেবে দেগে যাওয়া ধর্মেন্দ্র এই ছবিতে অনেকটাই অন্যরকমভাবে দর্শকদের সামনে এসেছিলেন। আর এই  ছবি তাঁর কেরিয়ারে আলাদা মাইলস্টোন।

dharmendra-3

 

১৯৭৫-এ ফের তিনি জুটি বাঁধেন ‘হৃষি’দার সঙ্গে। ১৯৭১-এ মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় বাংলা ছবি ‘ছদ্মবেশি’র হিন্দি রিমেক ‘চুপকে চুপকে’। অভিনয়ে ধর্মেন্দ্র আর শর্মিলা ঠাকুর। অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, আসরানি, কেষ্ট মুখোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট তাঁরকা ভিড়েও দর্শকদের নজর কেড়ে নিয়েছিল প্রফেসর পরিমল ত্রিপাঠী।

dharmendra- chupke

বলিউডে তাঁর প্রথম প্রবেশ ষাটের দশকে। প্রথম ছবি "দিল ভি তেরা হম ভি তেরে"। ছবির দুনিয়ায় যখন পা রাখেন তখনও হিন্দি ভালো বলতে পারতেন না। পঞ্জাবের টান স্পষ্ট। শুরুটাও সহজ হয়নি। মুম্বইতে নবাগত। মাথার ওপর ছাদ নেই। রাত কাটানোর জায়গা গাড়ি রাখার গ্যারেজ। একটা ড্রিলিং ফার্মে পার্ট টাইম চাকরি করতেন। মাইনে পেতেন ২০০ টাকা।

 সেখান থেকে ব্লকবাস্টার হিরো। তাঁর সময়ের সবচেয়ে সুদর্শন নায়ক মনে করা হত তাঁকে। অ্যাকশন হিরো হিসেবে তাঁর সঙ্গে তুলনা করার মতো সেই সময়ে আর কেউ ছিল না। ৩০০-রও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। "বন্দিনী", "সত্যকাম", "গুড্ডি", "চুপকে চুপকে", "শোলে", এবং আরও অনেক।

dharmendra-biru

 

কাছের মানুষরা বলেন রিয়েল লাইফের ধরম পাজি রিল লাইফের ধর্মেন্দ্রর চেয়ে অনেক বেশি রঙিন। কারাওকে লিস্টে একটানা পুরনো গান শুনতে ভালোবাসেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যানদের রিপ্লাই দেন চটপট। আর ভালোবাসেন প্রকৃতির মধ্যে থাকতে। 'চাষবাস' তাঁর প্যাশন। সে সব নিয়েই নিজের দুনিয়ায় ভালো থাকা। আজও ভালোবাসেন রূপালী পর্দা। পুরনো টানেই মাঝে মাঝে পর্দায় ফেরেন। পুরনোর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চান নতুনকে।

dharmendra-sholey

কাজ তাঁর কাছে শুধু ‘কাজ’ নয়, আসলে পুজো। একদিন এই কাজের জন্য ঘুরে বেড়াতে হয়েছে এ দোর ও দোর, এক স্টুডিয়ো থেকে আর এক স্টুডিয়ো। অপমান, হতাশা যে আসেনি তাও নয়, কিন্তু থেমে থাকেননি কোথাও। শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন নিজের কেরিয়ার। পঞ্জাবের গাঁয়ে থাকতেন। একটা ম্যাগাজিনে ট্যালেন্ট হান্ট শো’তে সেরা হওয়ার পর চলে আসেন বোম্বাই। সাত পাঁচ না ভেবেই বেছে নিয়েছিলেন অনিশ্চয়তার জীবন। তারপর শুধু সমুদ্রে সাঁতার আর পার হওয়ার গল্প।    

dharmendra- life in

নিজের কেরিয়ারে তিনি বারবার ভেঙেছেন নিজেকে। গড়েওছেন। হি-ম্যানের তকমা ছেড়ে নরমসরম প্রেমিকও হয়েছেন। ২০০৭ সালে অনুরাগ বসুর পরিচালনায় ‘লাইফ ইন মেট্রো’র অমল। যে কখনও ভুলতে পারেনি তার ছোটবেলার প্রেমিকা শিবানিকে। অনেক পথ পেরিয়ে এসেও বারবার তাকেই খুঁজেছে জীবনভর। সময় এগিয়েছে, বয়স বেড়েছে, কিন্তু তবু স্পষ্ট সেই প্রেমিকার মুখ। অমল হয়েও কাঁদিয়ে ছিলেন দর্শকদের ধরম সাব।

dharmendra-6

আজ ৮৭ বসন্তে পা দিলেন।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...