কড়া ‘ভাইরাস’কে ভালবেসেছিল সিনেমাপ্রেমীরা

নাকের তলায় মাছি গোঁফ। মাথার ওপর ঝাঁকড়া চুল। তারওপর বসে এক কোকিল। সাইকেল আস্তে যাক বা জোরে পাখি কিন্তু নড়েচড়ে না। তা দিয়ে যায় ডিমে।

 

এই পাখির মতোই পাখির মালিকের চরিত্র। তাঁর কড়া নিয়মের জীবনে ঘড়ির কাঁটার নড়চড় হয় না কখনও। আইআইটির কড়া প্রিন্সিপাল। ছাত্ররা ডাকে ‘ভাইরাস’ বলে। বছর বদলায়, ছাত্র বদলায় শুধু একই থেকে যান ‘ভাইরাস’। কড়া। রাগী। একগুঁয়ে  ডঃ বীরু সহস্ত্রবুদ্ধে।

bo-1

তবু ভাইরাসকে ভালবেসেছিল সিনেমাপ্রেমীরা। আর ভাইরাসের অভিনেতাকেও। নাম বোমান ইরানী।

একেবারে ছোটবেলায় ডিলেক্সিয়ার সমস্যা ছিল। মুখচোরা বোমানের পড়াশোনায় মনোযোগের সমস্যা হত। সেই সমস্যা কাটাতে সিনেমা দেখায় উৎসাহ। স্কুলের পর মাঝে মাঝেই চলে যেতেন অ্যালেকজান্ডার সিনেমায়। মায়ের যত্নে কাটিয়ে ওঠেন ডিলেক্সিয়া আর অমনোযোগের সমস্যা। নেশা হয়ে থেকে যায় সিনেমা দেখার অভ্যাস।

bo-2

বোম্বাইয়ের মিঠিবাই কলেজের ছাত্র, অভিনয় ভালবাসতেন। চুটিয়ে থিয়েটার করতেন। হাইস্কুল পাস করার পর তাজমহল প্যালেস হোটেলে ওয়েটার হিসেবে টানা দু’বছর কাজ করেছেন। মায়ের অ্যাক্সিডেন্ট জীবনমরণ লড়াই সামলাতে ছাড়তে হল সেই চাকরি। বেকারি শপে কেটে গেল পরের ১৪ বছর।

ছবি তুলতে ভাল লাগত। খুব ভালবাসতেন ক্যামেরা। তাজ হোটেলে থাকতে থাকতেই টিপসের টাকা জমিয়ে একটা ক্যামেরা কিনেছিলেন। চাকরি ছাড়ার পর সেই ক্যামেরা দিয়েই ছবি তুলতেন বিভিন্ন ইভেন্টে।

১৯৮৭-তে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেন বিনোদন দুনিয়ায়। পোর্টফোলিও শ্যুট করতেন। এতকিছুর মাঝেও কিন্তু চাপা পড়েনি তাঁর থিয়েটারের জীবন। ১৯৮১-৮৩ পর্যন্ত টানা হংসরাজ সিন্ধিয়ার কাছে অভিনয় শিখেছেন। বিখ্যাত থিয়েটার অভিনেতা অ্যালেক পদমসি ছিলেন তাঁর মেন্টর।

bo-3

সিনেমায় সুযোগ আসে কোরিওগ্রাফার শমিক ডাভরের মাধ্যমে। গান্ধী ছবিতে ‘মহম্মদ আলি জিন্না’র চরিত্র। ‘অ্যাম নট বাজিরাও’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। টানা ১০ বছর ধরে চলেছে সেই নাটক।

২০০০ সাল থেকে বিজ্ঞাপনী ছবিতে অভিনয় শুরু করেন। প্রথম হিন্দি ডেবিউ ‘জোশ’। ২০০৩-এ মুন্নাভাই এমবিবিএস। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি বোমানকে। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে পাকা করে নিয়েছিলেন নিজের জায়গাটা। তারপর সাফল্যের গল্প। বোমানের হাতিয়ার তাঁর অভিনয় আর আত্মবিশ্বাস।

৪১ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন অভিনেতা জীবন। যে বয়সে অনেকেই অবসরের ভাবনা শুরু করেন। বোমান দেখিয়ে দিয়েছেন, বয়স  শুধুই একটা সংখ্যামাত্র, কেরিয়ার বা জীবনের মোড় ঘোরাতে ইচ্ছে শক্তির জোরটাই আসল।

১৯৫৯-এর ২ ডিসেম্বর মুম্বই শহরে তাঁর জন্ম হয়।

বোমান কখনও স্থির থাকেন না। ‘স্যাটিসফ্যাকশন’ শব্দটা তাঁর অভিধানে নেই। নিত্য নতুন কাজে নিজেকে রঙিন করে রাখেন। অভিনয়ের পর সম্প্রতি গানে মাতিয়েছেন শ্রোতা। তাঁর গাওয়া গান নেট দুনিয়ায় ভাইরাল।  সেখানেই নতুন করে জীবন খোঁজার ডাক…       

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...