তখন তোমার একুশ বছর বয়স
আমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়...
বাঙালির পুজোর আড্ডায়, প্যান্ডেলের স্পিকারে আজও যখন এই গান বাজে তখন কথা থেমে যায়। সিরিয়াস আলোচনা থেকে এক নিমেষে টপিক বদল। মুহূর্তে মন ফুরফুরে। ষাটোর্ধ্ব বুকেও অতীত আনচান। পাশে দাঁড়ানো নওল কিশোর গানের টানে খুঁজে দেখে প্রিয় রাইকিশোরীটিকে। কী যে টান!
সাত জন্ম পার করেও বাঙালি ভুলতে পারবে না। বারবার প্রেমে পড়বে গান আর গায়িকার।
খোলা আঁচল। সাদা শাড়ি। স্টেপ কাট চুল। ঠোঁটের ওপরে সিগনেচার তিল। সাজসজ্জায় পুরোদস্তুর আরবান ঘরানা। অথচ অভিজাত এক স্নিদ্ধতা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখে। আরতি মুখোপাধ্যায়।
জন্ম দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জে। ১৯ জুলাই,১৯৪৩। ছোট থেকেই গানের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা। বাড়িতে উজ্জ্বল মানুষদের আনাগোনা ।
একদিন খেলার ছলেই হাতে উঠে এসেছিল সেতার, পিয়ানো, সরোদ। স্কুলে পড়তে পড়তেই বাসন্তী বিদ্যা বিথীতে গানে ভর্তি করে দিয়েছিলেন মা। সেখানে শাস্ত্রীয় ঘরানার পাশাপাশি লোকগীতি, নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক- সব ধরনের গান শিখতেন। গুরু হিসেবে পেয়েছিলেন সাগীর উদ্দিন খাঁ সাহেব, সুশীল বন্দোপাধ্যায় প্রমুখকে।
গানের জগতে যখন পা রাখলেন তখন সদ্য কিশোরী। অল ইন্ডিয়া ট্যালেন্ট প্রোগ্রাম: মেট্রো মার্ফি কনটেস্ট বিজয়ী হন। সালটা ১৯৫৫। লতা-আশাকে চেনার শুরুও কিশোরীবেলা থেকেই।
প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে প্ৰথম বড় ব্রেক হিন্দি ছবি ‘সাহারা’য়। বাংলায় প্রথম প্লেব্যাক ‘কন্যা’ ছবি দিয়ে।
শাস্ত্রীয় সংগীতের ছাত্রী, আধুনিক তো বটেই ছবির গানেও সমান দক্ষতায় অশ্বরথ ছোটান। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর আরতি মুখোপাধ্যায় দুই নাম এক সঙ্গে উচ্চারণ করত গানের জগত।
ষাট থেকে সত্তরের দশক বাংলা এবং হিন্দিতে মীনা কুমারী, সুচিত্রা সেন, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্না সেন এমন বহু অভিনেত্রীর লিপে তিনি প্লেব্যাক করেছিলেন।
শুধু বাংলা গান নয়, হিন্দি, অসমী, ওড়িয়াসহ প্রায় ৬ টির বেশি আঞ্চলিক ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন। বাংলা হিন্দি মিলিয়ে গাওয়া গানের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।
মাসুম ছবিতে শাবানা আজমির লিপে ‘দো নয়না’, ‘দাতা তেরা কই নাম’ ছবির ‘ শ্যাম তেরি বংশী’ আজও প্লে লিস্টের একেবারে প্রথম সারিতে।
তাঁর জীবন আগাগোড়াই আঁকা বাঁকা পথে চলেছে। তবু তিনি থেমে থাকেননি কোথাও। বয়ে গিয়েছেন নদী হয়ে। ভেসে গিয়েছেন। এক গান থেকে আর এক গানে মিশে গিয়েছেন। গান পাগল বাঙালির কাছে আজও তিনি অষ্টাদশী রাইকিশোরী!