লন্ঠনের হলুদ আলোয় যেন ঘোর লেগেছে চারপাশে। উজ্জ্বল আলোর মাঝে দাঁড়িয়েও ভিড় তেমন করে চোখে পড়ে না। বিয়ের সানাইয়ের সুরটুকুই কানে যায় না। শুধু জেগে থাকে একটা মুখ। পানপাতার আড়ালটুকু সরে গেলে চন্দনচর্চিত সেই মুখ দখল করে নেয় দর্শকের চোখ,মন,মগজ। চিরস্থায়ী হয়ে থেকে যায়। ভারতীয় সিনেমায় সৌন্দর্যের পাঠে লেখা হয় নতুন কাব্য। রাই বিনোদিনীর গাথা।
বর্ণিনী হোক বা শ্বেতাম্বরী, সালংকারা হোক বা নিরাভরণী ভারতীয় সৌন্দর্যের আলাদা সংজ্ঞা তৈরী করেছেন তিনি। সুভাষ ঘাই থেকে ঋতুপর্ণ বা সঞ্জয় লীলা বনশালী সকলেই ডুব দিয়েছেন এই নীল নয়নার দীঘি চোখে। ক্যামেরা ছবি এঁকেছে তুলির ভাষায়। হৃদকমলে একটাই নাম ঐশ্বর্য’।
১৯০৩ সালে ‘চোখেরবালি’ উপন্যাস লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। উপন্যাস রচনার ১০০ বছরে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিনোদিনী। তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে কাহিনি। সেই ভূমিকাতে ঐশ্বর্য রাই। ‘চোখের বালি’ তাঁর প্রথম বাংলা ছবি।
প্রতি ফ্রেমে নতুন ঐশ্বর্য। একেবারে অন্যধারায় ধরা দিয়েছিলেন। যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
১৯৯৪-এ ‘মিসওয়ার্ল্ড’র তাজ মাথায় ওঠে। বলিউডে প্রবেশ করেছিলেন তার কয়েকবছর পর। তবে শুধু মাত্র ‘গ্ল্যামারকুইন’ হিসেবে নয়, বলিউডে তাঁর লড়াই ছিল অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার। মডেলিং জগতে পা রেখেছিলেন বিজ্ঞাপনের ছবি দিয়ে। আমির খানের সঙ্গে বহুজাতিক পানীয়র বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে।
১৯৯৭-তে মণিরত্নমের ছবি ‘ইরুভার’-এ অভিনয় করেন। তারপর পা রাখেন বলিউডে। ঐশ্বর্য নিজেকে বারবার ভেঙেছেন ছবিতে। কেরিয়ারের একেবারে প্রথম দিকের ছবিগুলি এবং তার পরের পাঁচ বছরের ছবিগুলো দেখলেই সে বদল ভারী স্পষ্ট।
১৯৯৯-তে ‘হম দিল দে চুকে সনম’। ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। একদিকে সলমন খান অন্যদিকে অজয় দেবগণ। জোড়া নায়কের মাঝখানে ঐশ্বর্য। কিন্তু ছবির সবটুকু আলো শুষে নেন তিনি। তাঁর কেরিয়ারে প্রথম বড় হিট!
এই ছবি অনেকটা এগিয়ে দেয় তাঁকে। ‘তাল’ ছবিটির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।
নিজেকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা থেকে কোনদিন বিরতি নেননি। তার প্রমাণ ‘ধুম’, ‘গুজারিশ’, ‘জাজবা’র মতো ছবিগুলো। ছবি বদলেছে, পাল্লা দিয়ে বদলেছে তাঁর জীবনও।
‘ঐশ্বর্য রাই’ থেকে ‘ঐশ্বর্য রাই বচ্চন’ হয়েছেন, কিন্তু মূল জায়গায় তিনি একই। দর্শকদের ‘ঐশ্বর্য’।
১৯৭৩-এর আজকের দিনে জন্ম নেন কৃষ্ণরাজ ও বৃন্দা রাইয়ের কনিষ্ঠা কন্যা ‘ঐশ্বর্য’। আজ উনচল্লিশ বসন্তে পা দিলেন।