কলকাতা বললেই এক নিঃশ্বাসে যে জায়গাগুলোর নাম উঠে আসে তার মধ্যে অন্যতম ‘নন্দন’। চল্লিশ পঞ্চাশের দশকে বাংলা আইপিটিএ আন্দোলন, ফিল্ম সোসাইটি মুভমেন্ট, গান, নাটকে নতুন স্রোতের ঢেউ এসে লেগেছিল। পরবর্তী কয়েক দশকেও সেই ধারা বজায় ছিল। কিন্তু চর্চার অনুপাতে চর্চার জায়গা অপ্রতুল। ১৯৪৭ সালে কলকাতায় ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের ফলশ্রুতি হিসেবে নন্দন-এর জন্ম। নন্দন শুধু কলকাতা নয়, বাংলা নয়, সমগ্র পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র চর্চার কেন্দ্র।
১৯৮০ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চলচ্চিত্র চর্চা এবং প্রদর্শনের জন্য একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তলার উদ্যোগ নেয়। ওই বছরেই ২ সেপ্টেম্বর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। স্থপতি অমিতাভ সেনগুপ্ত।১৯৮৫ সালে সত্যজিৎ রায় উদ্বোধন করেন। নন্দনের লোগো ডিজাইন করেন সত্যজিৎ রায়।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে রবীন্দ্রসদন অডিটোরিয়াম গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে। ১৯৬৭ সালের অক্টোবরে রবীন্দ্রসদন তৈরির কাজ শেষ হয়। তার প্রায় ১৮ বছর পর রবীন্দ্রসদন চত্বরের প্রায় গা ঘেঁষে গড়ে উঠল নন্দন। অধুনা এই শহরের সবচেয়ে পুরনো ফিল্ম সেন্টার। তিনটি অডিটোরিয়াম আছে। তিনটি অডিটরিয়ামে যথাক্রমে ৯৩১, ২০০, ১০০ দর্শক বসতে পারে।
আর পাঁচটা সাধারণ প্রেক্ষাগৃহের থেকে অনেকটাই অন্যরকম কলকাতার নন্দন। মূলত শিল্পধর্মী ছবিই প্রদর্শিত হত। বানিজ্যিক ছবির প্রদর্শন এড়িয়ে চলা হত। কিন্তু পরে আর্থিক সমস্যায় কাটানোর জন্য বানিজ্যিক ছবির জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়।
১৯৯৫ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে এখানে শুরু হয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল জমে উঠত নন্দনকে কেন্দ্র করেই। ২০১১ সাল থেকে চলচ্চিত্র উৎসব নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বাঙালি সংস্কৃতির পীঠস্থান নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বর। হাজার এক মাল্টিপ্লেক্স মাল্টিপ্লেক্স গজিয়ে উঠেছে। মানুষের সিনেমা দেখার অভ্যাস বদলে গিয়েছে। তবু আজও কলকাতার প্রাণ নন্দন। আড্ডা-তর্ক-রাজনীতি থেকে প্রেম সব কিছু মিলিয়ে আজও নন্দন স্বমহিমায় উজ্বল। বাঙালির ঐতিহ্য আর গর্বের স্মারক।