বাড়ির ড্রইংরুমে যে অতিথি বসে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কটা তখনও ধোঁয়াশা। শিরায় শিরায় অনুভব করছেন রক্তের টান, শিকড়ের গন্ধ, কিন্তু তাকে আপন করতে যুক্তির তর্কের কাঁটাগুলোকেও এড়ানো যাচ্ছেনা।
শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তীর অসহায়তা ঢেকে দিল সুর। তানপুরার তারে গানের একাগ্র মূর্ছনা গ্রন্থি বেঁধে দিল মনমোহন মিত্র আর তার ভাগ্নি অনিলার মধ্যে।
অনিলার সংশয়, তার অসহায়তা খুব চেনা আম বাঙালির। আর বইয়ের অনিলাকে যিনি পর্দায় রূপ দিয়েছিলেন তিনিও বড় প্রিয়। ছবির নাম 'আগন্তুক'
বাবা উদয় শঙ্কর। কাকা রবি শঙ্কর। দাদা আনন্দ শঙ্কর।
তবু পরিবারের পরিচয়টাই তাঁর কাছে শেষ কথা হয়ে যায়নি কোনওদিন। কেরিয়েরের শুরু থেকেই পরিবারিক পরিচয়ের বাইরে বেরিয়ে তৈরি করেছেন নিজস্ব পরিচয়। অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী, কোরিয়োগ্রাফার মমতাশঙ্কর।
অভিনয়ের ক্লাসটা শুরু হয়েছিল বাবার কাছেই। আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিতেন মেয়েকে। একটা কথা কত রকম ভাবে বলা যায় অভ্যাস করাতেন। বাবা-মেয়ের এই মধুর গল্প উদয়শঙ্কর আর তাঁর কন্যা মমতার।
অভিনয় জীবন শুরুই হয়েছিল মৃণাল সেনের হাত ধরে। দাদা আনন্দ তখন তাঁর ছবিতেই সঙ্গীতের দায়িত্বে।
'মৃগয়া' ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন মৃণাল সেন। অভিনয়ের জন্য নির্বাচন করলেন কলেজ ছাত্রী মমতাকে। তবে চেনা ছকে অভিনয় নয়, একেবারে আলাদা কিছু। চরিত্রটা এক সাঁওতালি মেয়ের। তাই গায়ের রং হতে হবে কালো ।
দুপুরের কড়া রোদে বসে থাকতেন রোজ। গায়ের রং পুড়ে কালো। ক্যামেরার সামনে যখন এলেন, চেনাই যায় না কে এই নবাগতা।
ছাদের রোদে তেতে-পুড়ে গায়ের রং বদলের ভাবনাটাও একেবারেই তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত।
‘পারফর্মারের পারফেকশন’ তাঁর ‘সিগনেচার’। শুরু থেকেই। মঞ্চ হোক বা পর্দা কোনওদিন তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মৃণাল সেন। সত্যজিৎ রায়। ঋতুপর্ণ ঘোষ। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। গৌতম ঘোষ। দেশ এবং বিদেশের বহু বিখ্যাত পরিচালকের ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। নবাগতদের সঙ্গেও তিনি সমান স্বচ্ছন্দ।
Date-
১৯৫৫ সালের আজকের দিনে জন্ম হয় এই বিখ্যাত অভিনেত্রীর।