যখন মন খারাপ হয় তখন আমি কলমের খোঁজ করি। সাদা পাতায় ফুটিয়ে তুলি তাদের। অক্ষরে। কবিতায়।‘
তিনি কবি। তবে কবিতার পাশাপাশি গল্প-কাহিনী লিখতেও ভালোবাসেন। উর্দু, হিন্দি, ইংরেজি তিন ভাষাতেই লেখেন। বই এবং কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। সিনেমাপ্রেমি মানুষজন তাঁকে পর্দায় দেখে মুগ্ধ, কিন্তু পর্দার বাইরেও তিনি সমান বর্ণময়।
দীপ্তি নাভাল। চিকচিকে চোখের গমরঙা এই সুন্দরী এক সময় বলিউডে অন্যধারার ছবির অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন। তবে শুধুমাত্র অভিনত্রী পরিচয়কেই নিজের জীবনের শেষ কথা করে তোলেননি তিনি। হিন্দি ‘প্যারালাল’ ছবিতে যেমন অভিনয় করেছেন তেমনি পাল্লা দিয়ে চলেছে তাঁর তুলি আর ক্যামেরাও।
‘চশমেবদ্দুর’, ‘মির্চ মশালা’, ‘সাথ সাথ’, ‘অঙ্গুর’ একের পর এক ছবিতে নজর কেড়েছিলেন দীপ্তি। বলিউডের অন্যতম প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী। শুধু নিজের সময়ে না সব সময়েই। ক্যামেরার সামনে এলেই ম্যাজিক!
তাঁর বাবা ছিলেন অধ্যাপক উদয় নাভাল। চেয়েছিলেন মেয়ে চিত্রশিল্পী হোক, কিন্তু মেয়েকে টানে অন্য ছবি, ছায়াছবি। তাই দীপ্তির জীবনে সিনেমা আর অভিনয়ের পাল্লাই হল ভারি। নিয়মিত থিয়েটার করতেন। একবার অডিশন দিতে গিয়েছিলেন দূরদর্শনে। সেখানেই আলাপ হয় ফারুখ শেখের সঙ্গে। একটি অনুষ্ঠানে দীপ্তির সঙ্গে সহ-উপস্থাপকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল ফারুখকেও। কিছুদিন পর ফারুখ তাঁর কাছে জানতে চান তিনি সিনেমায় কাজ করতে আগ্রহী কিনা?
প্রবাসী পরিচালক বিনোদ পান্ডে তাঁর ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছে তখন, তাহলে দীপ্তি যোগাযোগ করতে পারেন। সেই যোগাযোগেই দীপ্তি পেয়েছিলেন তাঁর জীবনের প্রথম বড় ব্রেক। ১৯৮০তে মুক্তি পাওয়া ‘একবার ফির’।
বলিউডে পা রাখার পর তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল আরও একটি নাম। বলিউডের প্রথম ‘ইন্দো-আমেরিকান’ অভিনেত্রী তিনিই। লাইম লাইটের আলো যতই গায়ে এসে পড়ুক দীপ্তি কিন্তু কাছ ছাড়া হতে দেননি তুলি-কলমকে। ১৯৮১-তে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতাঁর বই ‘লমহা লমহা’।
প্রথম দিকে ছবির দর্শকদের কাছে তিনি ছিলেন পাশের বাড়ির মেয়ে। কিন্তু সেই ইমেজকে আমূল বদলে দিল জগমোহনের মুন্দ্রার ‘কমলা’। সমালোচকদের প্রশংসা তো পেয়েছিলেন সঙ্গে বদলে গিয়েছিল তাঁর অভিনয় জীবনও। ১৯৮১-তে মুক্তি পেল ‘চশমে বদ্দুর’। এই ছবিকে অভিনেত্রী দীপ্তি নাহালের কেরিয়ারের ‘দ্য বেস্ট’ ছবি বলাই যেয়।
একসময় স্মিতা পাতিল, শাবানা আজমির সঙ্গেই উঠে আসত তাঁর নামটাও। হিন্দি ছবির দুনিয়াকে অন্য ভাষায় কথা বলতে শিখিয়েছিলেন তাঁরা। বদলে দিয়েছিলেন দর্শকদের ছবি দেখার চোখ। কাজটা সহজ ছিল না। তবু তাঁরা পেরেছিলেন।
অমৃতসরে কেটেছে ছোটবেলা। সেই জীবনকে তিনি ভুলতে পারেন না কিছুতেই, বরং আগলে রাখেন। ছোটবেলার অমৃতসর উঠে এসেছে তাঁর কলমে। তাঁর বইয়ে ‘অ্যা কান্ট্রি কলড চাইল্ডহুড’ বইতে লিখেছে ছোটবেলা থেকে বড়বেলার গল্প।
ছকভাঙ্গা অভিনেত্রী হিসেবে আজীবন দর্শকদের মনের কাছের তিনি। সত্তর বসন্ত পেরিয়ে আজও দীপ্তি একইরকম। আজ তাঁর জন্মদিন।