পাড়ার মোড়ে রাম যাদবের সঙ্গে যখন দেখা হল, তখন তিনি লাল-সবুজ-সাদা চিনির লেই দিয়ে ফুল গড়ছিলেন। সামনের দু’চারটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে লোভাতুর চোখে সেদিকেই তাকিয়ে। রামের দু’পায়ের প্যাঁচে ফুট চারেকের একটা বাঁশ আঁটা, বাঁশের মাথায় সাপের মতো পেঁচিয়ে জড়ানো চিনির লেই। ধুলো যাতে না-লাগে, সেজন্য তাতে পলিথিনের চাদর জড়ানো।
রঙবেরঙের চিনির লেই চার আঙুলে টান দিলেই ফিতে। সেই ফিতে রামের আঙুলের কৌশলে কখনও হয়ে ওঠে গোলাপ ফুল, কখনও বা হাঁস, পাখি, হার্ট, খরগোস, সাপ, হাতি, ডায়নোসর। ছোট্ট ক্রেতার যেমন ইচ্ছে, তেমনটি গড়ে কাঠিতে জড়িয়ে হাতে তুলে দিয়ে তবেই রামের শান্তি। তাই, এগুলো শুধুই ক্যান্ডি নয়, এও এক ধরণের হস্তশিল্প। দাম, পাঁচে শুরু পনেরোয় শেষ। এর নাম ‘বোম্বে মিঠাই’।
‘বোম্বে মিঠাই’ কেন?
‘আগে শুধু বোম্বাইতেই এই ক্যান্ডি পাওয়া যেত তো, তাই। এখন সব জায়গায় পাওয়া যায়।’
‘এই যে ফটাফট এতকিছু তৈরি করো, কোথাও কি শিখেছিলে?’
‘পেটের দায়ে মানুষ কি না করে বলুন, ব্যবসায় নেমে বানাতে বানাতেই শিখে গেছি। তবে, বাচ্চাদের জন্য এসব করে এখন বেশ আনন্দও হয়।’ লাজুক হেসে জবাব দেন রাম। তারপর লেই জড়ানো বাঁশটা কাঁধে তুলে ঢুকে পড়েন পাশের গলিতে। বাজান হাতের ঘন্টি। যে ঘন্টি বাজিয়ে আমরা পুজো করি, সেটা দিয়েই যে পেট পুজোয় কাউকে আহ্বান করা যায়, সেটা রাম যাদবেরা না-থাকলে জানাই হত না।