লোকশিল্পের এক অন্যতম বিশেষ জাদুঘর গুরুসদয় সংগ্রহশালা। এই জাদুঘরটি কলকাতার জোকার ডায়মন্ড পার্কের নিকটে অবস্থিত। জাদুঘরটিতে রয়েছে ৩০০০ এর ও বেশি প্রত্নসামগ্রী, দেবদেবীরর মূর্তি, পুঁথি, মুখোশ, বাদ্যযন্ত্র, চিত্র, বস্ত্র ও কাঠশিল্প। জাদুঘরটি তৈরী হয়েছে গুরুসদয় দত্তের সারাজীবনের সংগ্রহের ভিত্তিতে। গুরুসদয় দত্ত ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী, পাশাপাশি তিনি ছিলেন লোকসাহিত্য গবেষক এবং লেখক। তিনি ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বহুল পরিচিত। তাই উক্ত জাদুঘরটি তাঁরই নামাঙ্কিত। এই জাদুঘরটি গুরুসদয় দত্তের পুত্র বীরেন্দ্রসদয় দত্তের সুপারিশে স্থাপিত হয়। তবে পরে তাঁর পুত্রবধূ আরতি দত্ত এই জাদুঘরটি পরিচালনা করতেন। জানা গিয়েছে যে, তিনি দীর্ঘসময়কাল পর্যন্ত এই জাদুঘরটির অধ্যক্ষা ছিলেন। ১৯৬৩ সালে জাদুঘরটি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। এরপর থেকেই জাদুঘরটি সকলের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়।
সেই সময়ে এই জাদুঘরের ব্যবস্থাপনাটি গুরুদাস দত্ত লোকআর্ট সোসাইটিতে স্থানান্তরিত হয়। পরে ভারতের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়ন লাভ করে। তবে বর্তমানে এই ঐতিহ্যময় জাদুঘরটি লোককল্যান এবং কারুশিল্পের সূক্ষ্ম প্রদর্শনীগুলির একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহ যা গ্রামাঞ্চলের প্রাণশক্তি এবং প্রাণবন্ততাকে প্রতিফলিত করে। এছাড়া শিল্প ও সামাজিক ঐতিহ্য গুলির একটি উজ্জ্বল চিত্র উপস্থাপন করে। অবিভক্ত বাংলার পাশাপাশি ভারতের সাংস্কৃতিক প্রভাব ও এখানে ফুটে উঠেছে। এই জাদুঘরে পরিদর্শনকারী শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারের কলাবিভাগ এবং কারুশিল্পসহ বিভিন্ন লোকের লিখিত পত্রিকাও রাখা আছে এখানে, যা গবেষক ও শিল্পপ্রেমীদের বেশ উপকৃত করেছে। এই জাদুঘরের ঠিক সামনে রয়েছে একটি সুন্দর বাগান এবং রয়েছে সেই বাগান সংলগ্ন একটি পুকুর। নানা রঙের ফুলে সমৃদ্ধ বাগানটি জাদুঘরের শোভা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। এই বাগানটির সৌন্দর্য দেশ, বিদেশ সকল পর্যটকদের মন জয় করে নেয় খুব সহজেই। তবে জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ হল, এখানে এক গ্যালারিতেই বিষ্ণু, দূর্গা এবং বুদ্ধের ১১ শতকের কালো পাথরের মূর্তি রয়েছে। তাই বলা যায় কলকাতার এক অন্যতম ভ্রমণ স্থান এই গুরুসদয় জাদুঘরটি। এখানে সারাবছরই দেশ বিদেশ থেকে নানা মানুষ আসেন এবং সেখানে সংগৃহিত মূল্যবান সংগ্রহগুলি দেখে থাকেন। আপনিও যদি এই সংগ্রহগুলি নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই পৌঁছে যেতে হবে ডায়মন্ড পার্কের কাছে অবস্থিত এই জাদুঘরটিতে।