গুন্ডাপ্পা রঙ্গনাথ বিশ্বনাথ, যিনি ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে ‘ভিশি’ নামেই পরিচিত তাঁর আজ ৭৩তম জন্মদিন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , ক্রিকেটের প্রতি সেই সময়ের অনেকের ভালোবাসা জন্মায় বিশ্বনাথের সূত্রেই । তখনও ভারতীয় ক্রিকেটে ‘গাভাসকার’ যুগ শুরু হয়নি। ১৯৬৯-এর নভেম্বরে বিল লরির অস্ট্রেলিয়া এল ভারতে। প্রথম টেস্ট গ্রীন পার্ক, কানপুরে। অস্ট্রেলিয়া তখন এক তারকাখচিত দল। ইয়ান রেডপাথ, কিথ স্ট্যাকপোল, ইয়ান চ্যাপেল, ডাগ ওয়াল্টার্স, পল শিহান, অ্যাশলে ম্যালেট, গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জি, এলান কনোলি, কে ছিলেন না সেই দলে? সেই ম্যাচে অভিষেক ঘটল ৫' ৩"র এক কর্ণাটকীর। নাম গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ।
কানপুরে ১৩৭ করে এলেন কলকাতায়। তখনও ইডেনে হাইকোর্টের দিকে স্টেডিয়ামের ওপরের অংশ বা মোহনবাগান মাঠের দিকের ওপরের অংশ হয়নি। ফলে গঙ্গার দিক থেকে বেশ হাওয়া দিত, আর সুইং বোলাররা বেশ সুবিধা পেত। গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জির ধাক্কায় ভারত প্রথম ওভারেই ০/২, ফারুক ইঞ্জিনিয়ার ফিরে গিয়েছেন। তিনি এলেন, নড়েচড়ে বসলেন দর্শক। স্টান্স নিলেন, প্রথম বলটাই তাঁর ট্রেড মার্ক শট, স্কোয়ার কাট। শিহানকে কভারে দাঁড় করিয়ে বল সীমানার বাইরে। ব্যস, সেই শুরু বহু বাঙালির বিশ্বনাথে মুগ্ধতা, মজে যাওয়া। বিশ্বনাথের খেলা দেখে মজেননি এমন ক্রিকেটেপ্রমী বিরল।
১৯৭৪-৭৫-এ চিপকে অ্যান্ডি রবার্টসের আগুনে পেস সামলে ৯৭। যে সমস্ত ভারতীয় ক্রিকেটারদের দেশের মাঠে স্মরণীয় ইনিংস আছে, তাতে অবশ্যই বিশ্বনাথের ৯৭ থাকা উচিত, লক্ষণের ২৮১, গাভাসকারের ৯৬-এর সঙ্গে। এরপর ঐ চিপকেই ১৯৮৪-৮৫, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ভারতের ২৫৫ রানের মধ্যে তাঁর ছিল ১২৪। মাঝে ১৯৭৮-এ কালীচরণের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁর একটা সেঞ্চুরি ইডেনে ছিল। অবশ্য কালীচরণের ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ভাঙা হাট। লয়েড, ভিভ, হোল্ডিং-সব তখন প্যাকার সিরিজ খেলতে যাওয়ার জন্য আসেননি।
বিশ্বনাথের খেলার একটা বিশেষত্ব ছিল, কব্জির পেলবতা। খুব বেশী পাওয়ার থাকত না শটে , কিন্তু ‘ম্যাক্সিমাম এফোর্ট মিনিমাম গেইন’। তূণীরে সব রকম শট থাকলেও ট্রেড মার্ক শট স্কোয়ার কাট। ১৯৭৯ তে আসিফ ইকবালের পাকিস্তান এসেছিল। ঐ ম্যাচে ইমরানকে হাঁটু গেড়ে একটা স্কোয়ার ড্রাইভ মারেন, যা এখনও মনে পড়ে। বেশিরভাগ স্লিপে ফিল্ডিং করতেন।
আর একটি ইনিংসের কথা বলে লেখা শেষ করি , ১৯৭৪-৭৫ পোর্ট অফ স্পেনের সেই বিখ্যাত চতুর্থ ইনিংসের ৪০৩ তাড়া করে জয়। তখনকার দিনে ঐটা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ রান তাড়া। ঐ ম্যাচে তাঁর ১২০ ছাড়া জয় বোধহয় অধরা থাকত।
তাঁর শেষ সিরিজটা ১৯৮৩ তে পাকিস্তানে। যা পাকিস্তানের দুই দেশপ্রেমিক আম্পায়ারদের জন্য একেবারেই ভালো যায়নি। বহুবার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছে।
দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন (১৯৭৫,৭৯)। ১৯৮৩-তে ভারত যখন বিশ্বকাপ জেতে, তখন তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলেও, একটি ম্যাচেও খেলানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে, একটা ছবি যা তখন আনন্দবাজারে বেরিয়েছিল, খুব ব্যথা দেয়। বিজয়ী ভারতীয় দলের মাঝে তিনি একা ট্রলি ঠেলে নিয়ে আসছেন।
ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা শিল্পী খেলোয়াড়কে আমরা এইভাবেই প্রতিদান দিয়েছিলাম। অনেক শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা স্যার আপনার ৭৩তম জন্মদিনে। ভালো থাকবেন স্যার।