রবি ঠাকুর কে নিয়ে বাঙালি নাকি বেশ পজেসিভ, বিশ্বকবি যিনি, তাঁকে কেবল বাংলার ভিতর আটকে রাখার প্রবণতা কেন? নিছক বাঙালি এক কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর নন। এখনকার ভারত ধীরে ধীরে রবি ঠাকুরের নানা বোধের, নানা দর্শনের অন্বেষণে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি এসে এই কথা গুলোই জানালেন বিখ্যাত কাব্যকার, গীতিকার এবং ছবির পরিচালক গুলজার।
গুলজার এর আগেও বহুবার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি ভ্রমণে এসেছেন কিন্তু এর সংগ্রহশালায় এই প্রথম ঘুরে দেখলেন তিনি। দর্শনার্থী পত্রে তিনি অভিব্যক্তি জানিয়ে লিখে রাখলেন, তাঁর কাছে এই স্থানটি তীর্থ স্থানের মতই। রবি ঠাকুরের সৃষ্টি শৈলী গুলজারের কাছে পাতায় পাতায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। তিনি জানান, রবি ঠাকুরের লেখা পড়লে তাঁর চোখের সামনে ভাসতে থাকে সব। কিন্তু রবি ঠাকুরকে বাঙালি যতটা বেঁধে রাখতে চায় তা নিয়ে আপত্তি আছে তাঁর।
২০১৬ -য় মুক্তিপায় 'গুলজার ইন কনভারসেশন উইথ টেগোর'। গুলজারে রবি-অনুবাদে সেই এলবামে গান গেয়েছিলেন শান এবং শ্রেয়া ঘোষাল। গুলজার জানালেন রবি ঠাকুর তো শুধুই বাঙালি কবি নন। তাঁর জন্ম যে দেশে রবি ঠাকুর সে দেশেরই কবি। অথচ বিশ্বভারতী দীর্ঘকাল দেওয়াল গেঁথে রেখেছিল এই সর্বজনীনতায়। এখন যদিও সে দেওয়াল ভেঙেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশ্বকবি রবি ঠাকুরের কবিতা, ভাবনা, দর্শন নতুন করে জানতে চাইছে সবাই। রবি ঠাকুর প্রয়াণের পঞ্চাশ বছর পরেও বিশ্বভারতীর কপিরাইট যতদিন ছিল সেটা রবি ঠাকুরের সৃষ্টির ব্যাপকতায় শুধুই একটা বন্ধন হিসেবে কাজ করে গেছে। সম্পূরণ সিং কালরা উর্ফ গুলজারের চোখে রবি ঠাকুর তো প্রতিনিয়ত একটা কিছু জানার অনুভবের বিষয়, যিনি যেমন করে পড়বেন তিনি তাঁর মত করেই রবি ঠাকুরকে আবিষ্কার করবেন; এমনটাই তো হওয়া উচিত।
রবি ঠাকুর যেন মহীরুহ। এমন মহিরুহে যদি গাছের ওপরে কোথাও একটি ফুল ফোটে তাতে কি গাছের শিকড় কে অস্বীকার করা যায়? মুলককে তো অস্বীকার করা যায় না। একজন স্রষ্টা হয়ে আরো এক মহান স্রষ্টার সৃষ্টিকে নিয়ে এভাবেই প্রত্যয়ী গুলজার। এই সময়ে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের সার্বজনীন দর্শন, বিশেষ ভাবে স্মরণ করলেন তিনি। রবি ঠাকুর যেভাবে ভারতবর্ষের ছবিটাই দেখতে পেতেন সেটা এখনকার সময়ে শিক্ষণীয়। খুব শীঘ্রই একটি 'এই কথাটি মনে রেখো' শিরোনামে একটি হিন্দি ভাষার শো শুরু হবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতেই। গুলজারের রচনা আর তাঁরই উপস্থিতিতে শুরু হবে এই প্রদর্শনীর পথচলা।