শখ থেকেই উপার্জন। ক্রমশই যেন চাহিদা বাড়ছে রঙিন মাছ চাষের। জানা যায়, বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয়তার ক্রম অনুসারে ফোটোগ্রাফির পরই চাহিদা রয়েছে রঙিন মাছ পালনের- বলে দাবি মৎস্য বিশেষজ্ঞদের। অ্যাকোরিয়ামে রঙিন মাছেদের পাখনা মেলে খেলে বেড়ানোর দৃশ্য উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও অবসাদ কাটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। কলকাতা, মুম্বই ও চেন্নাই রঙিন মাছের বৃহৎ প্রজননকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এই মাছ চাষ। আর এই বিষয়ে মৎস্য আধিকারিকরা জানিয়েছেন, রঙিন মাছ পালনের মাধ্যমে শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে বিকল্প আয়ের পথ খুলে যেতে পারে। এছাড়া আরও জানা যায় যে, প্রতিবছর রঙিন মাছের ব্যবসা ১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শুধু রঙিন মাছ চাষ করা নয়, মাছের খাবার, অ্যাকোরিয়াম প্রভৃতি বিক্রি করেও প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। কলকাতার গালিফ স্ট্রিট কিংবা হাওড়ার দাসনগরের বাজারে রঙিন মাছ বিক্রির লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা চলে প্রতিদিন বলে খবর। তাছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলার নানা জায়গায় রঙিন মাছের বাচ্চা উৎপাদন ও তা বিক্রির মাধ্যমে বিরাট ব্যবসা চলছে। তবে এই রাজ্য থেকে সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, জাপান, জার্মানি, মালয়েশিয়ায় রঙিন মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের থেকে জানা যায়, এ রাজ্য থেকে সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, জাপান, জার্মানি, মালয়েশিয়ায় রঙিন মাছ রপ্তানি হচ্ছে। মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ২৮৮ ধরনের রঙিন মাছ আমাদের দেশে জনপ্রিয়। এর মধ্যে ২৬১ ধরনের মাছ ডিম পাড়ে। এবং ২৭ ধরনের মাছ সরাসরি বাচ্চা দেয়। কলকাতার সল্টলেকে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফিশারিজ এডুকেশনে রঙিন মাছ পালনের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সাতদিন থেকে ২ মাসের কোর্সে কীভাবে রঙিন মাছ পালন করতে হয়, তার খুঁটিনাটি শেখানো হয়। এই বিষয়ে মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রঙিন মাছ চাষের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই মাছ চাষ নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। রয়েছে রঙিন মাছের উন্নতমানের খাবারের অপ্রতুলতা। এসব বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে রঙিন মাছের মাধ্যমে খুব ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। তবে এই মাছ পোষার জন্য কাঁচের অ্যাকোরিয়ামই সব থেকে ভালো। তবে অ্যাকোরিয়ামটি এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেখানে আলো-বাতাস পায়। অ্যাকোরিয়ামের নীচে মোটা বালি ও নুড়ি দিতে হবে। অ্যাকোরিয়ামের পিছনের দিক ২ ইঞ্চি পুরু করে বালি দিতে হবে। এর পর ঢাল করে অ্যাকোরিয়ামের সামনের দিকে বালি ১ ইঞ্চি পুরু হবে। এতে সামনে থেকে অ্যাকোরিয়ামের পিছন দিকে থাকা মাছেদেরও ভালোভাবে দেখা যাবে। তাছাড়া অ্যাকোরিয়ামের ভিতর যে নোংরা জমা হবে তা ঢাল বেয়ে সামনের দিকে চলে আসবে। ফলে পরিস্কার করতে সুবিধা হবে। অ্যাকোরিয়ামে বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাছের খাবার দেওয়ার জন্য কাপ রাখা দরকার। কম খাবার দিতে হবে। কারণ, বেশি খাবার দিলে অ্যাকোরিয়ামের জল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়। মাছেদের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে শ্যাওলা, জলের নীচে বেঁচে থাকে, এমন গাছ রাখতে হবে। নিয়ম মেনে পরিচর্যা করলে রঙিন মাছের রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। শুকনো ও জীবন্ত খাবার দিতে হবে। সপ্তাহে একবার করে জল পাল্টাতে হবে। অ্যাকোরিয়ামে গাছ বসানোর আগে শোধন করে নিতে হবে। এই পদ্ধতি মেনে মাছ চাষ করলে বেশ ভালো হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।