উত্তরবঙ্গে বেশ কিছুদিন হল বর্ষা এসে গেছে। বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মেই। তাই সব নদীতেই জল রয়েছে। তিস্তা ব্যারেজও ভরে উঠেছে জলে। মৎসজীবীরা তাদের কাজ করছেন নিয়মমাফিক। তেমনি শুক্রবার দুপুরে সঙ্গীদের সঙ্গে নৌকো নিয়ে মাছ ধরতে যান গজলডোবার ১২ নম্বর কলোনির বাসিন্দা রুহিদাস দাস।
জাল বিছোতে থাকেন তাঁরা তিস্তা ব্যারেজের লকগেটের কাছে। বেশ খানিকটা এলাকা জুড়ে জাল বিছানো হয়ে গেলে শুরু হয় জাল গোটানোর পালা। এরপরই হয় বিপত্তি। জাল গোটানোর সময় তারা টের পান, সেটি যথেষ্ট ভারী। রুহিদাস সহ মোট চারজন মিলেও তা তুলে পাড়ে আনতে যথেষ্ট হিমশিম খান। প্রচুর চেষ্টায় খানিকটা তোলার পর জালের দিকে তাকাতেই সকলের চক্ষু চড়ক গাছ। দেখেন, একটি-দুটি নয়, জালে ধরা পড়েছে আটটি বাঘা আড়।
জাল টেনে ১২ নং কলোনির কাছাকাছি আসতেই আরো লোকজনকে ডেকে আনেন জেলেরা। এক একটি প্রায় ১০ কেজি ওজনের সাতটি মাছ পাড়ে তুলে আনতে পারলেও সবথেকে বড়, বলা ভাল জাম্বো সাইজের ১২০ কিলো ওজনের মাছটি প্রচন্ড হুটোপাটি করতে থাকে। সেই মাছটিকে বাগে আনতে না পেরে জেলেরা জালটি জলেই ডুবিয়ে রাখেন। অনেকক্ষণ পর মাছটি আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। তারপর তার গায়ে প্লাস্টিকের দড়ি জড়িয়ে সবাই মিলে টেনে তোলে। ৩০০ টাকা কিলো দরে পাইকাররা সেখান থেকে সব মাছ কিনে নেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মৎস্য বিশেষজ্ঞ সুমিত মিত্র জানান, স্থানীয় নাম যদিও বাঘা আড়, তবে আসলে এটি বোয়াল গোত্রের মাছ। এদের রিভার মনস্টার বলা হয়। এরা মূলত মাছ খায়।এত বড় মাছ অন্য কোথাও থেকে ভেসে আসেনি বলেই মনে করেন সুমিতবাবু। ওই এলাকাতেই ছিল। নদীর জল বাড়ায় বাইরে বেরিয়ে এসেছে। এই মাছকে অনেক জায়গায় হেলিকপ্টার ক্যাট ফিশও বলা হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে এই মাছকে তাপাহ বলে। তিস্তায় বাঘা আড় মাছ ধরা পড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে এত বড় বাঘা আড় গত ২০ বছরে ধরা পড়েনি বলেই জানাচ্ছে স্থানীয় মৎস বিভাগ।