আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় কলকাতার নরেন
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? শীর্ষক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের একটি বেতার অনুষ্ঠান।
বাঙালি কে কেন্দ্র করে বাঙালির কী অভিমত?স্বজাতির বিশ্ব প্রতিনিধিদের প্রতি দেশের লোকেদের আবেগ কি ভালোবাসার মাত্রা ছুঁতে পারে?বিচারের ভার নিয়েছিল একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
২০০৪-এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৫ই এপ্রিল।তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের ভোটে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কুড়ি জনের জীবন নিয়ে পরিবেশিত হয় এই বেতার অনুষ্ঠান।
সেই তালিকায় সতেরো নম্বরের ঘর উজ্জ্বল করে রয়েছেন এপার বাংলার সিমলা পল্লীর নরেন্দ্রনাথ।
আদরের ঠাকুর রামকৃষ্ণের নিবেদিত শিষ্য। পৃথিবীর স্বামী বিবেকানন্দ। যাঁর কণ্ঠে বিদ্যুতের তেজ, যাঁর চোখে অতল সাগরের ঢেউ।
রবীন্দ্রনাথ রোমা রল্যাঁ কে বলেছিলেন, ভারতবর্ষ কে জানতে হলে বিবেকানন্দ কে জানুন ।তবে জেনে নেওয়া বিশ্ব বরেণ্য পণ্ডিতের অতিসংক্ষিপ্ত জীবন চর্যা।
জন্ম ১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারি। মা ভুবনেশ্বরী দেবী এবং বাবা বিশ্বনাথ দত্ত –র ষষ্ঠ পুত্রটি ছোট্ট থেকেই বুদ্ধিতে চৌকস, সাহসে আগুয়ান আর দুরন্ত-ডানপিটে।
আঠারোর বসন্তেই পরমহংস রামকৃষ্ণ নামক জ্ঞান বৃক্ষের স্মরণে আসা। সেই যোগ সাধনার পথে প্রথম পা বাড়ানো।
বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণের সান্নিধ্য ছিল মাত্র পাঁচ বছরের।প্রথমদিকে নরেন অস্বীকার করেছিলেন পরমহংসকে গুরু বলে মেনে নিতে ।প্রশ্ন তুলেছিলেন চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধেও। তবুও ঠাকুর আকৃষ্ট হন জেদি শিষ্যের প্রতি ।
রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর ব্রিটিশ ভারতের আর্থ সামাজিক অবস্থা নরেন এর এক ঝলক দৃষ্টিপাত ভিক্ষা করে।সেই ডাকেও দেন সাড়া। ক্রমশ নরেন থেকে বিবেকানন্দ হওয়ার যাত্রা শুরু ।
তাঁর ভারত ভ্রমণের সময় কখনও সন্ন্যাসীর মত ভিক্ষা করে জীবনধারণ করতেন। পায়ে হেঁটে, আবার কখনও বা অনুরাগীদের কেটে দেওয়া টিকিটে গুজরান হত যাত্রার।
১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর।শিকাগো। বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় তিনি ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।বয়স তখন তেইশ।সর্বকালের অন্যতম প্রভাবশালী মনীষীর বিশ্ব বন্দিত হওয়ার পালা।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিস্তারের পাশাপাশি চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে জনগণের সেবার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশন। গোটা পৃথিবী জুড়েই যা এখন মানবসেবার এক প্রকৃষ্টতম উদাহরণ।
এই বাংলায় স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে গবেষণা করেছেন সাহিত্যিক শঙ্কর। তাঁর উচ্চ চিন্তাধারা, আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা অনেক মানুষের জন্য প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে বলে সাহিত্যিকের ধারণা।
অনুষ্ঠানটির কুড়ি জন ব্যক্তিত্বের তালিকায় এ বঙ্গের আরও কিছু নক্ষত্ররা জায়গা করে নিয়েছেন। যথাক্রমে বিশ্বকবি,নজরুল, নেতাজী, সত্যজিৎ রায়,জগদীশচন্দ্র বসু, বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়, তিতুমীর, অমর্ত্য সেন ও অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।