রাজ্যের শিক্ষার মানোন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার দরকার তা বলাই বাহুল্য। এই বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। পড়াশোনার মান কেমন, স্কুলের পরিকাঠামো কেমন সেগুলি খতিয়ে দেখতে জয়েন্ট বিডিও থেকে জেলাশাসক পর্যন্ত সব স্তরের মোট ৭২ জন আধিকারিকরা যুক্ত হচ্ছেন ৭২ টি স্কুলের সঙ্গে। জেলাশাসকের তরফ থেকে সমস্ত অতিরিক্ত জেলা শাসক, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, বিডিও, জয়েন্ট বিডিও সহ সকলকে এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা প্রতি মাসে স্কুল পরিদর্শনের পাশাপাশি স্কুলের উন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় রিভিউ করবেন।
খোদ জেলাশাসক এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জুলাই মাসের প্রথমেই জেলাশাসক নিজে নারায়নগড়ের একটি স্কুলে যাবেন। আইসিডিএস, এসএসকে, এমএসকে পরিদর্শনের কথাও জানানো হয়েছে। জেলার কোন কোন স্কুলে কে যাবেন তা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ মনে করছেন, গ্রাম পঞ্চায়েতে আলোচনা পর্বটি না রেখে এস আই অফিসে রাখলে ভালো হত।
জেলাশাসক রশ্মি কমল এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকাও বের করা হয়েছে। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোন আধিকারিক কোন স্কুলে যাবেন। আগামী জুলাই মাস থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে চলেছে। জেলাশাসকের কথা অনুযায়ী, অনেকেই তাঁদের কাছে এসে আলাদাভাবে সমস্যার কথা জানান। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নিজেরাই গিয়ে সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন স্কুলে পড়াশোনার মান এবং সেখানকার পরিকাঠামো। পানীয় জল, শৌচালয়, বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক আছে কি না, তা দেখা হবে। সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সৌমনা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্কুলের পড়াশোনার মানোন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করার উদ্দেশ্যে সমস্ত অফিসারদের এক একটি স্কুলের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সার্বিকভাবে স্কুলগুলি কেমন কাজ করছে, তা দেখতেই সরাসরি নজরদারির এই ব্যবস্থা নিয়েছেন জেলাশাসক বলে জানা গেছে।
আশা করা যায়, এর ফলে স্কুলগুলির যেখানে যেটুকু খামতি রয়েছে, তা পুরণ করা যাবে। সাপ্তাহিক স্কুল খোলা থাকার সময়েই এই পরিদর্শন করা হবে। মিড ডে মিলের ব্যবস্থা কেমন তাও দেখা হবে। সেই সংক্রান্ত যে রেজিস্টার রয়েছে, তা সঠিকভাবে মেইনটেইন করা হচ্ছে কি না তাও দেখতে বলা হয়েছে আধিকারিকদের। স্কুলের ঘর, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, জলের ব্যবস্থা, স্কুল বিল্ডিং-এর পরিকাঠামো, তথা স্কুলের পাঁচিল ঠিকঠাক আছে কি না তাও দেখা হবে। এছাড়াও স্কুল কতটা পরিষ্কার-পরিছন্ন সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। সবকিছু খতিয়ে দেখার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই আধিকারিক একটি ক্লাসে গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আলোচনা সারবেন। মূলত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার ওপরেই ওই আলোচনা হবে। আলোচনার জন্য ৪০ মিনিট সময় ধার্য করা হয়েছে। তারপর একেবারে শেষ পর্যায়ে অন্য একটি ক্লাসে গিয়ে আধিকারিক ছাত্র-ছাত্রীদের সারপ্রাইজ টেস্ট নেবেন। যে বিষয়ে পড়ানো হয়ে গিয়েছে, সেই বিষয়ের ওপর আলোচনা হবে এবং সেই সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীরা কতটা বুঝল, তাও জেনে নেওয়া হবে। এর জন্য ১৫ মিনিট নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এভাবে বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষনের ফলে স্কুলগুলির উন্নতি হওয়া উচিত বলেই মনে করা হচ্ছে।