একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন শ্রীলঙ্কার সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পেসার লাসিথ মালিঙ্গা।
২০০৪ সাল নাগাদ শ্রীলঙ্কার জার্সিতে প্রথম অভ্যুত্থান হয় তাঁর। এক মাথা ঝাঁকড়া চুল, পিয়ারসড আইব্রো ও উল্কি বিশিষ্ট মূর্তি নিয়ে 'প্রায় বল ছোঁড়ার আঙ্গিকে' এক অদ্ভুত স্টাইলে বল করছেন এক তরুণ -দৃশ্যটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। সে সময় মালিঙ্গার বোলিং স্টাইল নিয়ে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেট মহলে। ১৪৫ কিমি বেগে ধেয়ে আসা নিখুঁত ইয়র্কার সামলাতে অনেক বাঘা ব্যাটসম্যান কেই বেগ পেতে হয়েছিল।
জীবনের প্রথম ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু হয়েছিল শ্রীলঙ্কার সমুদ্র সৈকতে। সে সময় শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন পেসার রামানায়েকের নজরে আসেন মালিঙ্গা। রামানায়েকের প্রশিক্ষণে সমুদ্র সৈকতের উপর রাখা এক জোড়া জুতোর উপর অনবরত বোলিং করে ইয়র্কারে হাত পাকিয়েছিলেন ৩৫ বছরের এই পেসার।
যদিও শুরুটা হয়েছিল টেস্ট থেকে। বিভিন্ন দলের হয়ে ডোমেস্টিক ক্রিকেট খেলে ২০০৪ এ অস্ট্রেলিয়ার বিরূদ্ধে টেস্ট সিরিজে প্রথম একাদশে জায়গা পাকা হয় তার। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রথম অভিষেক ম্যাচে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে শুরু করেন আন্তর্জাতিক কেরিয়ার। কিন্তু ক্রমেই সাদা বল হাতে তার আসল রূপ প্রকাশিত হতে থাকে। এরপর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দীর্ঘ ১৫ বছর খেলেছেন তিনি। কঠিন পরিস্থিতিতে, ডেথ ওভারে ধারাবাহিক ইয়র্কার বর্ষণ করে বিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলে দেওয়া ছিল তার স্বভাব। ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র পেসার যিনি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে পরপর চার বলে চার উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে ৪টি হ্যাটট্রিক রয়েছে তার পকেটে, ওয়াসিম আক্রমের পর এই বিরল কীর্তিত্ব আর কেউ অর্জন করেননি। পাশাপাশি বিশ্বকাপ কেরিয়ারেও ২টি হ্যাটট্রিক রয়েছে তার।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি টি ২০ ক্রিকেটেও উজ্জ্বল্ভাবে খোদাই করা থাকবে তার নাম। বিশ্ব টি ২০ ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি এখনও অবধি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটগ্রাহক। তাছাড়া আইপিএল-এ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে তার নাম।
চলতি শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ সফরের প্রথম ম্যাচই হবে শেষ ম্যাচ, এ কথা আগেই জানিয়েছিলেন। শেষ ম্যাচে ৯.৪ ওভার বল করে ৩৮ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট ছিনিয়ে নিয়ে দেশকে জয়ের পথে এগিয়ে দেন তিনি। পাশাপাশি মালিঙ্গার ঝুলিতে প্রবেশ করে ২টি মেডেন ওভার। এ দিন শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ৩১৪ রান করে ইনিংস শেষ করে। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২২৩ রানের মধ্যেই গুটিয়ে যায় মাশরাফি বাহিনী। শেষ বলে একটি উইকেট তুলে নিয়ে নিজের লেগাসি বজায় রাখেন মালিঙ্গা। ফলস্বরূপ ৮১ রানে জয়লাভ করে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০য় এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। সব মিলিয়ে জীবনের শেষ ওডিআই নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে মালিঙ্গার।
এ দিন দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার আগে দলের পক্ষ থেকে ‘গার্ড অফ অনার’ দেওয়া হয় তাঁকে। বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসে তার বিরাট অবদানের জন্য টুইটে তাকে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন সচিন তেন্দুলকর, জাস্প্রীত বুমরাহ সহ অন্যান্য ক্রিকেটার। শ্রীলঙ্কার জার্সি গায়ে আগামী দিনে হয়তো আরও ভালো পেসার উঠে আসবে, কিন্তু শ্রীলঙ্কা তথা বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসে চিরদিন বন্দিত হবে মালিঙ্গার নাম।