পশ্চিমবঙ্গের ভূমিগত ভাবে এক উচ্চতম স্থান হল বাঁকুড়া জেলা। তাই এখানকার আবহাওয়া বেশ রুক্ষ ও শুষ্ক। আর এই ধরনের আবহাওয়ার জেরে খরার প্রবণতাও এখানে অনেকখানি। তাই এখানকার কৃষক তথা চাষিদের কৃষি কাজে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এবার চাষীদের মুখে হাসি ফোটাবে পুষ্প, সম্প্রীতি, ধ্ৰুব ও ধীরেন। ধান উৎপাদনের সময় নানা ধরনের রোগ পোকায় আক্রান্ত হয় ধান গাছ গুলি। তাই এবার পোকার সঙ্গে মোকাবিলা করবে এই বিশেষ ধরনের ধান। বাঁকুড়া ধান গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এই ধানগুলি পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ভাবে চাষের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছে ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই।
এরপরে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষেও মিলেছে বেশ সাফল্য। জানা গিয়েছে যে, রোগ পোকা মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছে ধীরেন, সম্প্রীতি ও ধ্রুব এই তিনটি প্রজাতির ধান। পাশাপাশি আবার প্রবল ভাবে খরা সহনশীল হল পুষ্প। তাই এখন চাষীদের কাছে এই তিন জাতের ধানই বেশি করে গুরুত্ব পাচ্ছে।পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি গবেষণা শাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে বাঁকুড়ায়। শহরের বুকে অবস্থিত এই গবেষণা কেন্দ্রটির মূল লক্ষ্য নতুন নতুন উচ্চফলনশীল প্রজাতির ধান উদ্ভাবন করা। সেই সঙ্গে ইতিমধ্যে রুক্ষ লাল ও কাঁকুড়ে মাটিতে উপযুক্ত চাষের পদ্ধতি নিয়েও গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন যে, পুষ্প ধান বীজ তৈরি থেকে পাকা পযর্ন্ত সময় লাগে প্রায় ১০৫ থেকে ১১০দিন মত। এরপরে ফসল পেকে গেলে এই গাছ মাটিতে ঝুঁকে পড়ে না। হেক্টর প্রতি প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ টন পর্যন্ত ফলন হয় এই ধান গাছে। তবে চাষের জন্য রাজ্যের ছাড়পত্র পাওয়ার পর ২০১৫ সাল থেকে এই প্রজাতির ব্রিডার সিড তৈরি করা শুরু করেছে বাঁকুড়া ধান গবেষণা কেন্দ্র। এরপর ব্রিডার সিড বিতরণ শুরু হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে। ঠিক আবার একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গিয়েছে ধীরেন ধানের ক্ষেত্রেও। এই ধান পাকতে সময় লাগে প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ দিন মত। সাড়ে পাঁচ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায় প্রতি হেক্টরে। ধীরেন হল দীর্ঘ মেয়াদি প্রজাতির উচ্চফলনশীল ধান। এই ধানে আবার পাতা ঝলসা, শিষের গোড়া ঝলসা, পাতার বাদামী দাগ, খোলাপচা এবং পাতা মোড়ানো পোকার বিরুদ্ধে মাঝারি প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা গিয়েছে। সম্প্রীতি ও ধ্রুব এই দুই ধরনের ধানের আবার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেশ প্রবল। এই প্রজাতি রাজ্যে চাষের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছে ২০১৪ সালে। তাই গবেষকরা মনে করছেন, আগামী মরসুমে রুখাসুখা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন উঁচু এলাকায় একদিকে খরা সহনশীল পুষ্প ধান চাষের প্রবণতা যেমন বাড়বে তেমন রোগ পোকা মোকাবিলায় বাকি তিন প্রজাতির ধানের চাষও ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলবে। ফলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো রুখাসুখা এলাকার পাশাপাশি রাজ্যের উঁচু এলাকায় সর্বত্র চাষিদের মুখে হাসি ফোটাবে।