গ্রিসের ক্রেট অঞ্চলের ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে প্রাচীন মাতৃতান্ত্রিক মিনোয়ান সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র আইল্যান্ড অব ক্রাইসি। এই অঞ্চলেই ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মিনোয়ান সভ্যতা ব্যাপক প্রসারতা লাভ করে। তারপর কালের নিয়মেই ধীরে ধীরে এই সভ্যতার অবলুপ্তি ঘটতে থাকে। কিন্তু এক্ষত্রে বিলুপ্তির কারণটি ছিল বিস্ফোরণ। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের তারিখ নিয়ে মতভেদ থাকলেও রেডিও-কার্বন ডেটিং অনুযায়ী ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে সভ্যতার।
মিনোয়ান সভ্যতাকেই ‘ইউরোপের প্রথম প্রগতিশীল সভ্যতা’ বলা হয়। সম্প্রতি এই মিনোয়ান সভ্যতার বিপুল সম্পদ খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ক্রাইসির মাটি খুঁড়ে তাঁরা উদ্ধার করেছেন বিপুল পরিমান সোনার গয়না ও প্রচুর বহু মূল্যবান সম্পদ। তাদের অনুসন্ধানানুযায়ী ক্রাইসির এই অঞ্চলে আছে এই সভ্যতার বিশাল রত্নভাণ্ডার। এক্ষেত্রে বলা যায় প্রাথমিক পর্যায়ে এক্সপ্লোরেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েই এক্সকাভেশন অর্থাৎ অনুসন্ধান শুরু হয়। আর তাতেই ৩৮০০ বছরের পুরনো ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতার সন্ধান মেলে। এই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ির পর প্রত্নতাত্ত্বিকরা সফল হন। আশা করা যায় বিশ্ব ইতিহাসের ভাণ্ডারে আরো কিছু অভূতপূর্ব তথ্য অন্তর্ভুক্তি অপেক্ষমান।
গ্রিক পুরাণ মতে, রাজা মিনোস-এর থেকে এই সভ্যতার নামকরণ করা হয়েছে। মিনোয়ান সভ্যতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এর পাঁচতলা বাড়ির সমান উচ্চতার প্রাসাদ। প্রাসাদগুলির অভ্যন্তরে আবিষ্কৃত স্টোরেজ অঞ্চল ও সেই যুগে উন্নত পানীয় জলের ব্যবস্থাও ইতিহাসবিদদের নজর কেড়েছে। ক্রেট, সাইক্লাডেস, এজিয়ান, সাইপ্রাস, কেনান এবং লেভানটাইন উপকূল এবং আনাতোলিয়া, ভুমধ্যসাগরের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে ব্যবসার মাধ্যমে মিনোয়ান সভ্যতার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ২০০৯ এর শেষদিকে মিনোয়ান ধাঁচের ফ্রেস্কো এবং অন্যান্য নিদর্শনগুলি ইস্রায়েলের তেল-কাবরিতে কননাইট প্রাসাদ খননের সময় আবিষ্কৃত হওয়ায়, প্রত্নতাত্ত্বিকরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে মিনোয়ান প্রভাব কেনানীয় নগর-রাজ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল।
এগুলিই ইস্রায়েলে পাওয়া একমাত্র মিনোয়ান শিল্পকর্ম। ইতিহাসবিদদের মতে ব্যবসা সূত্রে মিশরের সঙ্গেও এই সভ্যতার যোগাযোগ ছিল। সোনার গয়না ছাড়াও কারুকার্য করা কাচের নানা আকারের টুকরো উদ্ধার হয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে এগুলো মিনোয়ানরা ব্যবসার কাজে লাগাতেন। মাটি খুঁড়ে যে কারুকার্য করা কাচের টুকরো উদ্ধার হয়েছে, তার অনেকগুলো মিশরীয় সভ্যতার। তা থেকেই তাঁদের অনুমান, মিশরেও এই সভ্যতার বিস্তার ঘটেছিল। তবে স্বর্ণ ব্যবসা যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল তা অনুমান করে যায়। এছাড়া স্বর্ণের প্রতি নারী পুরুষ নির্বিশেষে আকৃষ্ট ছিলেন। রত্নভাণ্ডারের খোঁজে ওই এলাকায় এখনো খননকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই বিশ্বাসে যে, নতুন আবিষ্কারে খুলে যাবে ইতিহাসের বহু অজানা দিক।