সোনার হলমার্ক বিশুদ্ধ কি না জানা যাবে মোবাইল থেকেই

সোনার জিনিস শুধু আজকের নয়, যুগ যুগান্ত ধরে সমাজে আলাদা ভূমিকা পালন করে আসছে, সে বনেদিয়ানাতেই হোক, বা ধার্মিক যে কোনো অনুষ্ঠানে, অথবা অর্থনৈতিক দিক থেকে- সোনার চাহিদা ভারতের তথা বিশ্বের বাজারে এক আলাদা মাত্রা বহন করে চলেছে। এ হেন সোনার বিশুদ্ধতা নিয়েও তাই সবসময়েই রয়েছে চাপান-উতোর। তাই বিশুদ্ধতা যাচাই করার উপায় হিসেবে সোনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে হলমার্ক বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। সম্প্রতি সোনার গয়নায় হলমার্কিং বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার।

                        কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, সাধারণ মানুষের পক্ষে বর্তমান পরিকাঠামোয় সোনার বিশুদ্ধতার ব্যাপারে চোখ বুজে বিশ্বাস করার মত তেমন কোনও সুযোগ নেই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই হলমার্কের বিষয় নিয়ে কারচুপির খবর নজরে এসেছে। এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত কেন্দ্রীয় সরকার। যাঁরা এই হলমার্কযুক্ত গয়না কেনেন, তাঁদের সেই সোনার বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। সেই পরিস্থিতির অবসান হতে চলেছে এবারে। মোবাইল ফোন থেকেই এখন থেকে সোনার হলমার্ক যাচাই করা যাবে। এভাবে ফোনের মাধ্যমে যাতে সোনার বিশুদ্ধতা যাচাই করা যায়, তার ব্যবস্থা করে দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্রের খবর, এইরকমই প্রযুক্তি আনতে চলেছে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস বা বিআইএস। এখানে হলমার্কিং হবে ডিজিটাল সুবিধাযুক্ত। গয়নায় একটি কোড নং দেওয়া থাকবে, যার মাধ্যমে অনলাইনেই যাচাই করা যাবে বিশুদ্ধতা। যদি দেখা যায়, সেখানে কোনো রকম কারচুপি করা হয়েছে, তাহলে ক্রেতাকে দ্বিগুণ পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন দোকানদার। সব ক্ষেত্রে সোনায় হলমার্কিং এখন বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু তা বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক

                    যেভাবে 'কোর ব্যাঙ্কিং' পরিষেবা চালু রয়েছে, অনেকটা সেই ধাঁচেই 'হলমার্কিং' হবে। অর্থাৎ কোথায় কি হচ্ছে, তা কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করা সম্ভব হবে। হলমার্কিংয়ের পর যে কোড গয়নায় দেওয়া হবে, সেটি ব্যবহার করে মোবাইল থেকেই হলমার্কিংয়ের খুঁটিনাটি জানতে পারবেন ক্রেতা। হলমার্কিং সেন্টারগুলোর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হর্ষদ আজমেরা জানান, বর্তমানে সরকার অনুমোদিত হলমার্কিং সেন্টার দেশে প্রায় ৮৫০টি। রাজ্যে এরকম সেন্টার রয়েছে ৯০টি। কিন্তু বহু এমন সেন্টার রয়েছে যারা অনুমোদন ছাড়াই হলমার্ক দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। নতুন ব্যবস্থায় সেই সমস্যা মিটবে বলেই আশা করা যায়। সম্প্রতি ক্রেতা সুরক্ষা আইনের যে সংশোধন হয়েছে, তাতে হলমার্কে যতটা কারচুপি করা হয়েছে, তার দ্বিগুণ সোনার দাম ফেরত দিতে হবে ক্রেতাকে। হর্ষদ আজমেরা জানান, সাধারণত এক ক্যারাটের তফাতে সোনার দামের চার শতাংশ তফাৎ হয়। সেক্ষেত্রে সোনার দামের আট শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাবেন গ্রাহক।

                কেন্দ্রীয় ক্রেতাসুরক্ষামন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান জানিয়েছেন, হলমার্কিং বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে বাণিজ্যমন্ত্রক অনুমোদন দিয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে হলমার্কিং নকশার জন্য দায়ীরও দেওয়া হয়েছে বম্বে আইআইটিকে। সেখানেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে হলমার্কিং-এর নকশা করা হবে। সেই কাজ এমনভাবে করা হবে, যেখানে কোনও হলমার্কিং সেন্টার যদি গয়নায় হলমার্ক বসায়, বিআইএস কর্তারা দফতরে বসেই তাতে নজরদারি করতে পারবেন। হলমার্কিং শেষ হলে বিআইএস একটি কোড দেবে, যা থেকে গয়নার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...