কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ছাত্রী সে। রহস্য ভেদ আসলে তাঁর শখ। বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া না দিলে অঙ্কের পাতায় তার মন বসে না। অংক কষার থেকেও তাঁর মন গোয়েন্দাগিরিতে সায় দেয় বেশি।
মেয়ে মানেই সে হবে কোমল। তাঁর জীবন জুড়ে থাকবে শুধুই তাঁর পরিবার। তাঁর বাইরে শখে বা প্রয়োজনে চাকরি সে করতেই পারে তবে দিনের শেষে সেবা প্রদান করাই হবে তাঁর কাজ। এমন ধারণাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছিলেন যে সমস্ত চরিত্ররা, গোয়েন্দা গার্গী তাঁদের মধ্যেই একজন।
গার্গীর পুরো নাম গার্গী ব্যানার্জী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংকের ছাত্রী সে। ছোট থেকেই বুদ্ধিমতী, সাহসী, ডাকাবুকো। জীবনের গতিপথের ছক ভাঙতে সে ওস্তাদ। রহস্য সমাধান তাঁর মাথার খাবার, বা বলা ভালো মাথার খোরাক। তবে প্রতি ক্ষেত্রে অযাচিতভাবেই রহস্য জলে জড়িয়ে পড়েছে গার্গী। নেহাত ‘কোইনসিডেন্স’। তবে দুর্ঘটনা হোক বা ঘটনা প্রবাহে জড়িয়ে পড়লেও গার্গীর বুদ্ধির কাছে হার মেনেছে অপরাধীরা। বুদ্ধির জেরেই সে মূলত পরাস্ত করে অপরাধীদের। গার্গীর ডাকনাম মিতুন। দাদা-বৌদির পরিবারেই তাঁর বড় হওয়া। পাঁচজন সাধারণ মেয়ের জীবনের ছন্দের সঙ্গে খুব একটা তফাৎ নেই গার্গীর জীবনের। তবে তফাৎ গড়ে ওঠে তার বুদ্ধিমত্তার কারণেই।
তপন বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত গোয়েন্দা গার্গী চরিত্রটি সেইসব ছক-ভাঙা মেয়েদের প্রতিনিধি। প্রায় তিরিশটিরও বেশী উপন্যাস লিখেছেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়েন্দা গার্গীকে নিয়ে। প্রাপ্তবয়স্ক পাঠক-পাঠিকাদের জন্যই লেখা এগুলি।
বাংলা সাহিত্যে মহিলা গোয়েন্দাদের স্থান কিছুটা হলেও সংকুচিত। মহিলা গোয়েন্দাদের উত্থান বেশ খানিকটা সময় নিয়েছে। যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য মহিলা গোয়েন্দাদের বাংলা সাহিত্যে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে এই গোয়েন্দা গার্গী একজন। মূলত দাদা বৌদির পরিবারে বড় হলেও গার্গী “ঈশ্বরের সবুজ চোখ” উপন্যাসে তাঁর ক্লায়েন্ট সায়ন চৌধুরীকে বধূহত্যার অভিযোগ থেকে মুক্ত করে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন।
নব্বইয়ের দশকে গার্গীর গোয়েন্দা কাহিনী “ঈশ্বরের সবুজ চোখ“ ছোটপর্দায় “ঈর্ষা” নামে প্রচারিত হয়েছিল। অভিনেত্রী ইন্দ্রানী হালদার গোয়েন্দা গার্গীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। চলচ্চিত্রেও গোয়েন্দা গার্গীকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে বলেই শোনা যায়। তবে ছোটপর্দায় গোয়েন্দা গার্গী বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এসেছে।
সাহিত্যের পাতায় গোয়েন্দা গার্গী যথেষ্টই জনপ্রিয় চরিত্র। তার বুদ্ধিমত্তার কারণেই তাঁর আকর্ষণ। যেসব ছকভাঙা, ডাকাবুকো মেয়েরা গার্গীর মত নিজের স্বাধীন ইচ্ছেপথে চলার ব্রত নেয়, গোয়েন্দা গার্গীর চরিত্র তাদের জন্য নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা।