সনাতন ধর্মের প্রত্যেকটি দেব দেবীর মতো দেবী লক্ষ্মীর উৎপত্তিরও রহস্য রয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে জানা যায় যে,
পরম বৈষ্ণব নারদ মুনি ভগবান নারায়ণকে দেবী লক্ষ্মীর উৎপত্তির বিষয়ে প্রশ্ন করলে দেবীর সৃষ্টি রহস্য ব্যাখ্যা করে ভগবান
বলেছিলেন যে, সৃষ্টির পূর্বে রাসমণ্ডলস্থিত পরমযোগী শ্রীকৃষ্ণের বাম দিক থেকেই দেবী লক্ষ্মী আবির্ভূতা হন। মঙ্গলকাব্যে
আবার লক্ষ্মী দেবীকে শিব পার্বতীর কন্যা সন্তান রূপে দেখানো হয়েছে। বিষ্ণুপুরাণে বলা হয়েছে দেবীর সমুদ্র থেকে উত্থানের
কথা। সেই কাহিনী অনুযায়ী দেবরাজ ইন্দ্রের পাপের শাস্তি পেয়েছিলেন দেবী লক্ষী। অভিশপ্ত হয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র আর ফল
ভোগ করেছিলেন দেবী লক্ষী। জানেন তো সেই কাহিনী?
পুরাণে বলা হয়েছে যে, দুর্বাসা মুনি ভ্রমণ করছিলেন, হঠাৎ ভ্রমণরত অবস্থায় অপ্সরা বিদ্যাধরীর সঙে তাঁর দেখা হয়।
অপ্সরার কন্ঠে এক অপূর্ব পুষ্পহার দেখে মুনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন, অপ্সরা তখন মুনিকে সেই কন্ঠহার দিয়ে দিলেন। এরপর
দুর্বাসার সাথে দেখা হল ঐরাবতে আসীন দেবরাজ ইন্দ্রের। ঋষি সেই হার দেবরাজ ইন্দ্রকে উপহারস্বরূপ দিলেন, ঋষির দেওয়া
সেই উপহার কোথায় রাখবেন বুঝতে না পেরে ঐরাবতের মাথায় সেই মালা রাখলেন দেবরাজ ইন্দ্র। এদিকে ফুলের গন্ধ
ঐরাবতের পছন্দ না হওয়ায় সে মাথা ঝাঁকিয়ে ফেলে দেয় সেই পুষ্পহার। ঋষি দুর্বাসা এমনিতেই অল্পে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতেন, এই
ঘটনায় তিনি আরো ক্রুদ্ধ হয়ে যান ও দেবরাজ ইন্দ্রকে অভিশাপ দেন,“ আমার দেওয়া মালা মাটিতে ফেলে দিলে তুমি! তাই
তোমার ত্রিলোক এখন শ্রীহীন অর্থাৎ লক্ষীছাড়া হয়ে যাবে।” দুর্বাসা মুনির এই অভিশাপের ফলে স্বর্গলোক দেবী লক্ষীকে
হারালেন। নির্বাসিতা হয়ে দেবী লক্ষী গেলেন সমুদ্রের নীচে পাতাল লোকে। দেবী লক্ষ্মীর চলে যাওয়ার পর দেবতারা শক্তি হারিয়ে
ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়লেন ও তিন লোকে অলক্ষীর রাজত্ব শুরু হয়ে গেল, অর্থাৎ অভাব-অনটন, দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হল।
কীভাবে আবার শ্রীকে অর্থাৎ দেবী লক্ষ্মীকে ফিরে পাওয়া যায় সেই উপায় খুঁজতে ব্রহ্মা, মহেশ্বর সহ সকল দেবতারা ছুটলেন
ভগবান নারায়ণের কাছে। তখন ভগবান নারায়ন বুদ্ধি দিলেন সমুদ্র মন্থন করতে হবে। কিন্তু দেবতারা তো শ্রীহীন হয়ে দুর্বল হয়ে
পড়েছেন তাদের একার পক্ষে তো এই কাজ সম্ভব নয়! তাহলে উপায়? তখন অসুরদের ডেকে পাঠানো হলো। দেব অসুরগণ
সম্মিলিত হয়ে উভয় শক্তি একত্রিত হয়ে সমুদ্র মন্থন করা হল। সমুদ্র মন্থনের ফলে নানা রকম রত্ন, মণিমাণিক্য সমেত
অমৃতসুধা উঠে এল এবং অবশেষে উঠে এলেন দেবী লক্ষী। দেবী লক্ষ্মীকে এরপর সহধর্মিনী হিসেবে গ্রহণ করলেন ভগবান
নারায়ণ। ভগবান নারায়ণ জগৎপালক, এই জগতকে প্রতিপালন করবার জন্য প্রয়োজন ধন-ঐশ্বর্য ও সম্পদের তাই লক্ষ্মী
দেবীকে তিনি জগত পালন কার্যে সহধর্মিনী রূপে গ্রহণ করলেন, নারায়ণের সঙ্গে বৈকুণ্ঠলোকই হল তাঁর বাসস্থান। সমুদ্র মন্থনের
পর সমুদ্রের থেকে দেবীর উদ্ভব হয়েছিল বলে সেই থেকে দেবী হলেন সমুদ্রোদ্ভবা।