ভারতে ভিন্ন ধর্মের সহাবস্থান,ঐক্য থাকলেও বলতে দ্বিধা নেই এখানে মন্দিরের সংখ্যা নেহাত কম নয়।সারা দেশ জুড়ে আছে বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির।আর তাতে আছে কতই না বৈচিত্র- আধুনিক সময়কালে অনেক হাল ফ্যাশনের প্রয়োজনভিত্তিক দেবতাদেরও আবির্ভাব ঘটেছে। আর তাই ভক্তের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান- সে যাই হোক, আবার পরিবেশানুযায়ী বদলে যায় সেই মন্দিরের রীতি , প্রথা। তাই স্বাভাবিকভাবেই সব মন্দিরেই আছে ভিন্ন নিয়ম। কিন্তু এই কথা বলছি কারণ এমন এক মন্দিরের কথা জানাবো যার রীতি এক্কেবারে অভিনব। আজ সেই কথাই হোক।
কেরলের কোল্লামের এক মন্দিরের ছবি বাকি মন্দির থেকে এক্কেবারে আলাদা। আরো একটু স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায়, এখানে নারী ও পুরুষ এক হয়ে যান ভক্তির বশে।মন্দিরটি কোট্টানকুলাঙ্গারা, এখানে শক্তির ভগবতী রূপকেই আরাধনা করা হয়। এতদূর ঠিকই আছে। তবে এখানেই আছে এক আশ্চর্যজনক রীতি ।এই মন্দিরে পুরুষরা পুজো দেন মহিলাদের মতো শাড়ি ও গয়না পরে। শুধু তাই নয়, অনেকেই আবার মাথায় খোঁপা বেঁধে সেজেগুজেও পুজো করেন।
কিন্তু এই অদ্ভুত রীতির কি কারণ ! জনশ্রুতি আছে যে, বহু বছর আগে ওই মন্দিরের জায়গায় ছিল ঘন জঙ্গল। তার উত্তর-পশ্চিম কোণে ভূতাকুলাম নামে এক ছোট্ট পুকুর ছিল।এই অঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরা সেটিকে বিষাক্ত সাপের আশ্রয়স্থল বলে বিশ্বাস করতো।বৃষ্টির সময়, সেখান থেকে জল প্লাবিত হয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলটি উর্বর এবং আবাদযোগ্য করে তোলে । ফলে এই জায়গাটি ঘাস এবং খাঁটি জলে পূর্ণ হওয়ায় পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে রাখালের দল তাদের গবাদি পশু নিয়ে সেখানে জড়ো হত।
জনশ্রুতি আছে যে, বহু বছর আগে একদিন একদল রাখালএই জায়গা থেকে একটি নারকেল পায় এবং ভূতাকুলামের দক্ষিণ অংশে একটি বড় পাথরের উপর নারকেলটি আঘাত করতেই পাথর থেকে রক্তের ফোঁটা দেখতে পায়। ঘটনার ব্যাখ্যায় জ্যোতিষ পরামর্শ দেন যে,পাথরে অতিপ্রাকৃত শক্তি রয়েছে এবং তার পূজা মন্দির নির্মাণের সাথে সাথেই শুরু করা উচিত। প্রবীণ এবং রাখালরা নারকেল ,খেজুর খুঁটি, পাতা ব্যবহার করে একটি অস্থায়ী মন্দির নির্মাণ করেন।মন্দিরে মহিলারাই পুজোর প্রদীপ জ্বালাতেন। এই ঐতিহ্যকে মেনে নিয়ে রাখালরা মহিলার পোশাক পরে মন্দিরে পূজা দিতে শুরু করে। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা গ্রাম জুড়ে। তারপর সেখানে মন্দির স্থাপিত হয় এবং সেই মন্দিরের দেবীকে সন্তুষ্ট করতেই নারীদের বেশ ধারণ করে পুরুষরা পুজো দিতে আসে । আর সেই শুরু ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা একমাত্র নারী বেশেই পুরুষরা দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন। তাই অতীত থেকে আজ সেখানে চলে আসছে ওই একই নিয়ম। আগে শুধুমাত্র ওই এলাকার বাসিন্দারাই মন্দিরের এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতো , তবে বর্তমানে দেশ বিদেশ থেকে আশা বহু মানুষই এই পুজোয় অংশ নিয়ে থাকে। কোট্টনকুলাঙ্গারা উৎসব (বা কোটনকুলাঙ্গারা চামায়াভিলাক্কু) প্রতি বছর এই মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে রাজ্য জুড়ে এবং এখন বাইরের পুরুষরাও শাড়ি পরিধান করেন। রাতে তারা ঐতিহ্যবাহী প্রদীপ প্রজ্বলন করে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় । ভক্তরা দেবীর আশীর্বাদ নিতে মন্দিরে যান। দেবীকে সন্তুষ্ট করতে এই অদ্ভুত প্রথা আজও চলছে - স্বমহিমায়।