'গর্ভধারিনী মা' -এই কথাটা প্রায়শই শুনতে পাই আমরা। মা সন্তান গর্ভে ধারণ করে, জন্ম দেয় ও লালন পালন করে, এ বিষয় যেন পূর্বপরিকল্পিত। শুধুমাত্র মানব প্রজাতির মধ্যে নয়, প্রায় সব প্রাণীর ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু জীবজগতে এমন একটি প্রাণী রয়েছে, যে প্রজাতিতে পুরুষেরা সন্তানের জন্ম দেয় ও লালন পালন করে। জানেন সেই প্রানীর নাম?
সিংনাথিডি পরিবারের এক মৎস্য গোষ্ঠীর মধ্যে প্রকৃতির নিয়মের এই উল্টোদিক কাজ করে। এই পরিবারের পুরুষেরা গর্ভে সন্তান ধারণ করে। এই মৎস্যগোষ্ঠীদের মধ্যে রয়েছে -সি হর্স, পাইপ ফিস ও সি ড্রাগন।
মূলত দেহের বিশেষ গঠনের কারণেই এই জাতির পুরুষেরা সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করে। এই শরীরের গঠন অনন্য। সি হর্সের পুরুষদেহে একটি থলি থাকে, যেখানে ডিম জমা থাকে। প্রথমে স্ত্রী প্রাণীটি পুরুষ প্রাণীর পেটে ডিম স্থানান্তরিত করে এবং পুরুষ প্রাণীটি সেই ডিমগুলো যত্ন করে তা দিতে থাকে। এই প্রানী গর্ভধারণের যে নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, ততদিনে খুব যত্ন করে ডিমগুলির লালন পালন করে। যতক্ষণ না সন্তান প্রসব হচ্ছে, ততদিন ডিমগুলোতে পুষ্টির যোগান দিতে থাকে তারা।
সি হর্সের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হতে প্রায় ৪ সপ্তাহ সময় লাগে এবং একসাথে প্রায় ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার অবধি ছানার জন্ম দেয় এই প্রানী। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, এই প্রসবের সময় কাল প্রায় ১২ ঘন্টা। দীর্ঘ এতটা সময় অবধি তারা সহ্য করে এই প্রসব যন্ত্রণা। তবে ডিমে তা দিয়ে ডিমগুলো নিষিক্ত করা ছাড়া, ছানা ফুটে বের হবার পর তাদেরকে জীবাণু থেকে রক্ষা করার সমস্ত দায়িত্ব নেয় প্রাণীটি।
অপরদিকে, পাইপ ফিশের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটা একটু আলাদা। এদের দেহের গঠন অনেকটা সি-হর্সের মতোই, তবে স্ত্রী পাইপ ফিশ, পুরুষ পাইপ ফিশের মাথার কাছে থাকা জনন থলিতে ডিম পাড়ে। থলিতে ডিমগুলো নিষিক্ত হয় এবং পুরুষ পাইপ ফিশ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ডিমে তা দেয়। এদের জনন থলিতে সি হর্সের তুলনায় অনেক কম সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা থাকে। এরা মাত্র ৫ থেকে ৪০টি ছানা ধারণ করতে পারে।