আচ্ছা, বৃষ্টি ভেজা একটা রোমান্টিক দিনে কী করতে ইচ্ছে করে?? নিজের প্রিয় মানুষটির সঙ্গে সোজা চলে যেতে ইচ্ছে করে না আউট্রাম ঘাটে? গিয়ে একটা নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়াতে? বাস্তবে যদি নাও সম্ভব হয়, মনে মনে যেতে তো অসুবিধা নেই? বর্ষার বিকেলে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, পাগলা হাওয়া, ঝাপসা হয়ে আসা হুগলি নদী আর....। আজ আসুন, মনের মানুষের সঙ্গে মনের ময়ূরপঙ্খীতে চড়ে ভেসে যাওয়া যাক হুগলি নদী বা গঙ্গায় আর জেনে নেওয়া যাক আমাদের প্রিয় শহরের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী ঘাট সম্পর্কে। আজ বলব আউট্রাম ঘাটের কথা যে ঘাটটি বাবুঘাটের দক্ষিণ দিকে এখনো স্যার আউট্রামের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ব্রিটিশ সেনাপতি স্যার জেমস্ আউট্রামের জন্ম স্কটল্যান্ডে, ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৯শে জানুয়ারি। ষোলো বছর বয়সেই তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মনে রাখতে হবে সেই সময় ভারতে পুরোদমে ব্রিটিশ শাসন চলছে। কুড়ি বাইশ বছর বয়সেই শিকারী হিসেবে তিনি বেশ নাম করেন। দেশে ভীল বিদ্রোহ হলে কঠোর ভাবে সেই বিদ্রোহ দমন করেন। ১৮৫৭র সিপাহী বিদ্রোহ দমনে ও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। ১৮৬৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডে মারা যান। ব্রিটিশ ভারতের সেনাবাহিনীতে তাঁর বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা মনে রেখে ব্রিটিশ সরকার তাঁর স্মৃতিতে হুগলি নদীর তীরে আউট্রাম ঘাট নামে এই ঘাট নির্মাণ করে। এই ঘাটটি থেকে তৎকালীন ব্রহ্মদেশের বা বার্মার জাহাজ ছাড়ত।
ইতিহাসকে বদলানো যায়না। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, যে সিপাহী বিদ্রোহকে এই দেশের মানুষ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ধাপ বলে মনে করেন, আজও শহীদ মঙ্গল পাণ্ডের কথা, ঝাঁসির রানী লক্ষ্মীবাইয়ের কথা গর্বের সঙ্গে, পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন, সেই সিপাহী বিদ্রোহ দমনে যিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, আজ স্বাধীন ভারতে তেমন একজন মানুষের নাম কলকাতা শহরের কোনো প্রিয় জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে রাখার প্রাসঙ্গিকতা আছে কি?
এবার সমাপ্তিতে আসা যাক।
......''চৌকাঠের সঙ্গে দড়ি ঝুলিয়ে কিংবা বিষ খেয়ে যে মরণ, সে রকম মৃত্যু নয়, আউটরাম ঘাটে বেড়াতে গিয়ে সন্ধ্যার সোনালি মেঘের ভিতর অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে করে; মনে হয় আর যেন পৃথিবীতে ফিরে না আসি।" —'‘ও, এই রকম? কিন্তু এ তো কোনো সম্ভবপর কিছু কথা নয়। আউটরাম ঘাট কোথায় ?” —'‘গঙ্গার একটা ঘাট!" — "কোনদিকে বলো তো?” —“তুমি দেখোনি।'’ — "ঢের জাহাজ দেখা যায় বুঝি সেখান থেকে?" — "তা যায়।" — রেঙ্গুনে যে-জাহাজগুলো যায় তা দেখেছ? — "দেখেছি।" —“আমি একবার দেখেছিলাম — সে। অতবড় জাহাজ মানুষ বানায় কী করে"–জীবনানন্দ দাস।
আর কিছু কি বলার প্রয়োজন হয়?....