ঘাটকাহিনী: জগন্নাথ ঘাট

আজ যে ঘাটের কাহিনী শোনাবো তার সঙ্গে যার নাম জড়িয়ে আছে তিনি আমাদের প্রাণের মানুষ, জীবন দেবতা তিনি। ঠিক ধরেছেন! এই জগন্নাথ ঘাটের সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম জুড়ে আছে। কী করে? বলছি সেটা। তার আগে এই জগন্নাথ ঘাটের ইতিহাস নিয়ে একটু আলোচনা করি কেমন?

Jagannath--Ghat-body

সে তখন কোম্পানির আমল। ব্রিটিশদের সঙ্গে সেইসময় বাংলার কিছু ব্যবসায়ী পুরোদমে ব্যবসা চালাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন নামকরা ব্যবসায়ী ছিলেন মুর্শিদাবাদের শোভারাম বসাক। ইনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে জামাকাপড়ের ব্যবসা করে সেইযুগে মানে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই কোটিপতি হয়েছিলেন। তো সেই সময় কলকাতা ধীরে ধীরে ইংরেজদের ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে। শোভারাম বুঝলেন যে কলকাতায় এসে থাকলে তাঁর ব্যবসা আরো সমৃদ্ধি লাভ করবে। তাই পরিবার নিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে প্রথমে হুগলি এবং তারপরে কলকাতায় চলে এলেন এবং তৎকালীন কলকাতারই গোবিন্দপুরে থাকতে লাগলেন। গোবিন্দপুরে দুর্গ তৈরির জন্য জমির প্রয়োজন হওয়ায় তিনি গোবিন্দপুর ছেড়ে সপরিবারে বড়বাজার এলাকায় বসবাস শুরু করলেন। তাঁর বাড়ির পশ্চিমদিকে ছিল গঙ্গা। তিনি গঙ্গার একটি ঘাট তৈরি করলেন এবং তার গৃহদেবতা জগন্নাথের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন। এই মন্দিরের নামেই ঘাটটির নাম হয়ে গেল জগন্নাথ ঘাট।

Jagannath--Ghat-body-1

এবার আসি পরের ভাগে। কীভাবে এই জগন্নাথ ঘাটের সঙ্গে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের নাম জড়িয়ে গেল। ১৯০৫ সালে যেদিন বঙ্গভঙ্গ আইন কার্যকর হয় সেদিন অর্থাৎ অক্টোবরের ১৬ তারিখে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান রাখীবন্ধনের মাধ্যমে। এই জগন্নাথ ঘাট থেকেই রাখীবন্ধন উৎসব শুরু করেছিলেন তিনি। এখানেই প্রথম গাওয়া হয়েছিল "বাংলার মাটি বাংলার জল বাংলার বায়ু বাংলার ফল পুণ্য হউক পুণ্য হউক পুণ্য হউক হে ভগবান"... রীতিমতো ঢাক ঢোল শঙ্খ বাজিয়ে মিছিল করে এই জগন্নাথ ঘাটে পৌঁছান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আরো অনেকে, সমাজের বিশিষ্ট মানুষেরা। এখানে গঙ্গায় স্নান করে উঠে এসে তাঁরা পরস্পরকে রাখী পরান। ঘাটে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের হাতে নিজে রাখী বেঁধে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং। সেদিন থেকে এই ঘাট পুণ্যস্থান। প্রত্যেক বাঙালির কাছে এই জগন্নাথ ঘাট তীর্থ ভূমি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...