তিনি জার্মানির ‘দ্য বম্বার অফ দ্য নেশন'। ক্রিকেটে যদি রান মেশিন হয় সচিন তেন্ডুলকর, ফুটবলে তাহলে গোল মেশিন নিঃসন্দেহে গার্ড মুলার।
আচ্ছা মুলারকে কেন 'গোল মেশিন' বলা হবে না বলুন তো! রেকর্ড সেই কথাই বলছে। জার্মানির হয়ে ৬২ ম্যাচে করেছেন ৬৮ গোল। বায়ার্নের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। ৬০৭ ম্যাচে ৫২২টি গোল করেন মুলার। গোটা ফুটবল কেরিয়ারে তিনি দেশ ও ক্লাব মিলিয়ে ৭৮০ ম্যাচে ৭১১টি গোল করেন। ১৯৭২ সালে জার্মানিকে ইউরো কাপ দিয়েছেন। ইতিহাসের অন্যতম টপ গোল স্কোরার তিনি। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ গোল তার। এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে (১৯৭২) সর্বোচ্চ ৮৫ গোলের রেকর্ড তাঁরই দখলে। আর 'দ্য বম্বার অফ দ্য নেশন?' এত জোরে শট মারতেন যে গোলার মত বল জালে জড়িয়ে যেত। গোলকিপার কিছু বোঝার আগেই বল গোলে।
ইউরোপিয়ান ফুটবলার অফ দ্য ইয়ার অর্থাৎ ব্যালেন ডি’অর পান ১৯৭০ সালে। ৭০ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১০ গোল করেন মুলার। এত গোল এক বিশ্বকাপে কেউ করেনি। দুর্ভাগ্য যে এরপরও ওই বছর কাপ ওঠেনি জার্মানির ঘরে। চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল ইউলে রিমে ট্রফি চিরকালের মতো চলে যায় জগো বনিতোদের ঘরে। হাল ছাড়েননি। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টে ৪ গোল করলেন মুলার এবং ফাইনালের ম্যাচ নির্ণায়ক গোলটিও তাঁর। কাপ যায় ডয়েচল্যান্ডে।
সাধে কি আর জার্মান ফুটবলের কিংবদন্তি তিনি। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ টোটাল ফুটবল দিয়ে বিশ্বমাতানো ইয়োহান ক্রুয়েফের নেদারল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বজয় করে ম্যানশাফটরা। নায়ক তো মুলার। ওই ডিফেন্স ভেঙে জয়সূচক গোল করা প্রচন্ড শক্ত। সেটাই করে দেখিয়েছিলেন মুলার।
বিশ্বকাপ করা মুলারের ১৪টি গোল করে তিনি দীর্ঘ ৩২ বছর সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছিল। ২০০৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোনালডো তাঁকে ছাড়িয়ে যান। ওই রেকর্ড ২০১৪ সালে ভাঙেন আরেক জার্মান মিরস্লাভ ক্লোসে।
তাঁর মৃত্যুতে বায়ার্ন মিউনিখের সিইও জার্মানির কিংবদন্তি গোলকিপার অলিভার কান জানিয়েছেন, “গার্ড মুলারের মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। বায়ার্নের ইতিহাসে তিনি অন্যতম সেরা কিংবদন্তি। মুলারের কৃতিত্বের সঙ্গে কারোর কৃতিত্ব মিলবে না। উনি জার্মান ও বায়ার্নের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার ছিলেন। ওঁর মতো খেলোয়াড় ও ব্যক্তি আর হবে না। বায়ার্নকে বিশ্বের অন্যতম বড় ক্লাব করে তোলার নেপথ্যে থাকবেন মুলার। উনি আজীবন আমাদের হৃদয়ে থেকে যাবেন।”
বায়ার্নের প্রেসিডেন্ট হার্বাট হাইনার বলেন, ”বায়ার্নের দুঃখের দিন। কালো দিন। মুলার সব থেকে বড় ফুটবলার। ওনার মতন ভালো মনের মানুষ এবং ফুটবলার আর হবে না।”
মেশিন হঠাৎ থেমে গেল কিন্তু‘ দ্য বোম্বার অফ দ্য নেশন'? সে নাম মুছে যায়নি। যাবেও না। ওই বিখ্যাত বাংলা গানের মতো হৃদয়ে লিখ নাম। সে নাম রয়ে যাবে। গার্ড মুলার এভাবেই ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে থেকে যাবেন।