বালিশ খেয়েছেন কখনো? খাননি? সেকি! ভাবছেন বালিশ আবার খাওয়া যায়? খুব যায়। সেই বালিশ যদি হয় রস, ছানা আর ক্ষীরের মেলবন্ধনে তৈরী, তাহলে! আজ সেই সন্ধান দেব।
বলছি বালিশ মিষ্টির কথা। যার সন্ধানে যেতে হবে বাংলাদেশের নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডের "গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার"-এ। দোকানের নামেই লুকিয়ে আছে এই অভিনব মিষ্টির স্রষ্টার নাম। প্রায় ১২০ বছর আগে গয়ানাথ ঘোষাল এই অভিনব মিষ্টি তৈরি করেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল এমন এক মিষ্টি বানাবেন যা তাঁকে অমরত্ব দেবে আর হলও তাই।
একটু নতুনত্বের আশায় দুধ-ছানা ও ময়দা সহযোগে তিনি একদিন বানালেন এক বিশাল রসের কোল বালিশ। আর ক্রেতারা সেই চেহারা দেখে আকৃষ্ট হয়ে স্বাদ চেখে দেখতেই বনে গেলেন তাজ্জব। মুখে দিতেই পেলেন এক অদ্ভুত স্বাদ। নিজেরাই মিষ্টির চেহারা ও স্বাদ দেখে নাম দিলেন বালিশ। ব্যস, সেই থেকে ছড়িয়ে গেল বালিশ ও তার মালিকের নাম। ক্রমেই পরিচিত হতে থাকল ‘গয়ানাথের বালিশ’, তখন অবশ্য গয়ানাথের দোকানেই পাওয়া যেত এই বালিশ। এখন অবশ্য অন্য দোকানেও পাওয়া যায়,তবে নানা সাইজে।
এবার বলব এই বালিশ বানানোর রহস্য। বালিশ তৈরি হয় দুধ-ছানা, চিনি ও ময়দা দিয়ে। প্রথমে ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। মণ্ড দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ। পরে তা ভাজা হয় চিনির গরম রসে। এরপর ঠাণ্ডা করে ও চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। এক সময় তা রসে টইটম্বুর হয়ে যায়। বিক্রীর সময় বালিশের ওপর দেওয়া হয় ক্ষীরের প্রলেপ। এ ছাড়াও বালিশ বানানোর প্রক্রিয়ায় কিছুটা গোপনীয়তা আছে যা ব্যবসার স্বার্থে প্রকাশ করতে চান না কারিগররা।
এখন এই বালিশ বিক্রী হয় পিস হিসেবে। এর সাধারণ সাইজ তিনটি। যার দাম ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা। ২০০ টাকা মূল্যের বালিশ আকারে ১৩ থেকে ১৪ ইঞ্চি হয়। ওই মিষ্টির ওজন ৮০০ থেকে ১০০০ গ্রাম হয়ে থাকে। ৫০-১০০ টাকা দামের বালিশ ও বানিয়ে দেন বিক্রেতারা। এর চেয়ে বেশি ওজনের বালিশও বানানো হয়। তবে তা অর্ডার দিলে তৈরি করা হয়। নেত্রকোনায় যেকোনো অনুষ্ঠানে এখনো প্রাধান্য পায় বালিশ। সাথে বালিশ থাকলে ক্লান্তি বেশ কম হয়।
যদিও আজ দোকান গয়ানাথ ঘোষালের নামে থাকলেও তাঁর পরিবারের কেউ কিন্তু এই দোকানের সত্বধারী নয়। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় তাঁর পরিবারের অনেকেই ভারতে চলে গেলেও তিনি যাননি। কিন্তু পরে পরিবারের টানে গয়ানাথ ১৯৬৯ সালে ভারতে চলে যান। এ সময় তিনি প্রতিষ্ঠানটি কুমুদ চন্দ্র নাগের কাছে বিক্রী করেন। কুমুদ নাগ আবার বছর ছয়েক পর বালিশ তৈরির প্রধান কারিগর নিখিল মোদকের কাছে তা বিক্ৰী করেন। এখন তাঁর তিন ছেলেই দোকান পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। তবে স্রষ্টার ছবির সাথে আজও সাক্ষাৎ হবে দোকানে গেলে। নানা ধরণের বালিশের স্বাদ পেতে একবার এই চত্বরে ঢুঁ না মারলেই নয়। এহেন আরামদায়ক রসস্নাত বালিশ আর পাবেন কোথায়!