গাছের আড়ালে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর জলে কুমির। এমনই রোমাঞ্চে ভরা অভিজ্ঞতা নিতেই আসতে হবে এপার বাংলা ও ওপার বাংলায় বিস্তৃত সুন্দরবনে। কিন্তু ডলফিন? সেভাবে শোনা না পেলেও সুন্দরবন কিন্তু ডলফিনেরও। এক সময় প্রচুর পরিমাণে ইরাবদি প্রজাতির ডলফিন দেখা যেত এই অঞ্চলে।
২০০৬ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী সুন্দরবনের নদীগুলোতে মোট ৪৫১ টি ইরাবদি ডলফিন ছিল। আর গঙ্গা নদীতে মোট ২২৫টি ডলফিন ছিল। মিষ্টি জলের এই ডলফিনের সংরক্ষণের জন্যে একটি প্রকল্প চালু করেছিল বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সুন্দরবনের বেশি কিছু নদীতে এই আশ্চর্য প্রাণীটির দেখা মিলবে।
আয়তনের বিচারে সুন্দরবন হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্ৰোভ অরণ্য। বিখ্যাত সুন্দরী গাছের দেখা মিলবে এখানে। আর এই গাছের নাম থেকে সুন্দরবন নামটির উৎপত্তি হয়েছে। পর্যটকদের প্রিয় এই ভ্রমণ কেন্দ্রের রয়েছে ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮টি প্রজাতির উভচর প্রাণী। সুন্দরবনের ৩২% রয়েছে ভারতে আর বাকি ৬২% রয়েছে বাংলাদেশে।
আজকের সুন্দরবন আর অতীতের সুন্দরবনের মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য। স্বাধীনতার আগে ইংরেজদের প্রচেষ্টায় এই দ্বীপগুলি মানুষের বসবাস যোগ্য স্থানে পরিণত হয়েছিল। ১৭৭০ সালে ও ১৭৭৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কালেক্টর মিস্টার ক্লড রাসেল সুন্দরবনের বহু অঞ্চলে ইজারা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। সেই সময় সুন্দরবনের ৬৪'৯২৮ বিঘা জমি দেশি ও বিদেশি জমিদারের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিল ইংরেজরা। বিদেশ জমিদারের নামে নামকরণ হয়েছিল সুন্দরবনের বহু অঞ্চলের। এই নামের অঞ্চলগুলি পরিচিত।
সময় যত এগিয়েছে ততই নিয়মের বদল ঘটেছে। বহু বছর ধরে সুন্দরবনে পর্যটকদের গাইড হওয়ার অধিকার ছিল শুধু মাত্র পুরুষদের। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে মহিলাদের ট্যুরিস্ট গাইডের পেশা বেছে নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময় বহু মহিলা ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। বনদফতরের তরফ থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এই কাজের।
বছরের প্রায় সব সময় পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায় এখানে। তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের সময় সুন্দরবনে ভ্রমণের সঠিক সময়।