তৈরী হোন ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে নদীভ্রমনের সঙ্গী হতে। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় দু বছর হল কলকাতায় গঙ্গার হেরিটেজ ট্যুর শুরু করেছে। সারা রাত ধরে লঞ্চ ভ্রমণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন একটি লঞ্চে করে গঙ্গায় এখন হেরিটেজ ট্যুর করা হয়। দেশি ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে তা যথেষ্ট আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এবারে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ আরো একটা নতুন পরিকল্পনা করছে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য।
কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার কয়েকদিন আগে সরকারি কাজে বাংলাদেশ গিয়ে জানতে পারেন, সেখানে প্যাডেল স্টিমারে করে পদ্মা সহ বিভিন্ন নদীতে ভ্রমণ করানো হচ্ছে পর্যটকদের। তিনি ভালোভাবেই জানেন আমাদের এখানেও ঠিক ঐরকমই ৬২.৬ মিটার লম্বা এবং ২.৫ মিটার চওড়া ৭৫ বছরের পুরোনো একটি প্যাডেল স্টিমার রয়েছে। 'পি এস ভূপাল'। স্কটল্যান্ডের ডেনি অ্যান্ড কোম্পানির তৈরী ১৯৪৪ সালের এই স্টিমারটি বহু বছর ধরে খিদিরপুর ডকে অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শুধু পোর্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এই স্টিমারে প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, অবহেলায় পড়ে থাকা ওই স্টিমারটিকেও কাজে লাগানো হবে। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ।
বেসরকারি সংস্থাদের কাছ থেকে আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছিল। এতেই সাড়া পাওয়া গেছে। একটি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা স্টিমারটিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলবে। খরচ হতে পারে এক কোটির কিছু বেশি টাকা। কলকাতা বন্দর রয়্যালটি বাবদ তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা পাবে প্রতি মাসে। তাছাড়া মাসে কয়েকদিন স্টিমারটি ব্যবহার করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইন্ডিয়া জেনারেল নেভিগেশন এন্ড রেলওয়ে কোম্পানির জন্য উক্ত স্টিমারটি তৈরী হয়েছিল। স্বাধীনতার আগে অবিভক্ত বাংলা ও অসমে স্টিমার পরিষেবা চালাত মূলত দুটি সংস্থা। ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, পদ্মা প্রভৃতি নদীপথে তাদের স্টিমার চলত। লঞ্চগুলি যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন করত। কয়লা পুড়িয়ে উৎপাদিত বাষ্প দিয়ে ইঞ্জিন চালানো হত। এই লঞ্চগুলিতে দুদিকে চাকার মত দেখতে প্যাডেল থাকত, যেগুলো জল কাটিয়ে লঞ্চটিকে এগিয়ে নিয়ে যেত, তাই নাম প্যাডেল লঞ্চ বা প্যাডেল স্টিমার। কিন্তু এখন নতুন করে চালানোর সময় ডিজেলেই চলবে ওই লঞ্চ। তবে লঞ্চের পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য দুদিকেই প্যাডেল থাকবে। বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার জানিয়েছেন, ওই প্যাডেল ঘুরবে পাশাপাশি অন্যান্য পুরোনো ঐতিহ্যও বহাল রাখা হবে।
কেওপিটি-র হেরিটেজ কো-অর্ডিনেটর গৌতম চক্রবর্তী জানান, 'পি এস ভূপাল' সংস্কার হলে প্রায় একশো যাত্রী নেওয়া যাবে। এখন হেরিটেজ ট্যুর করানো হয় যে লঞ্চে, তাতে মাত্র ত্রিশ জন যাত্রীর জায়গা রয়েছে। বেশি যাত্রী নেওয়া গেলে টিকিটের দামও কমতে পারে। সামনের বছর শুরুর দিকে প্যাডেল স্টিমারটি চালু হতে পারে বলে গৌতমবাবু আশা প্রকাশ করেছেন। কলকাতা ছাড়াও এই স্টিমারটি গঙ্গাবক্ষে মায়াপুর অব্দি যেতে পারে বলে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, জানান গৌতমবাবু। এইভাবে গঙ্গাবক্ষে লঞ্চভ্রমণের মাধ্যমে পর্যটকদের আরও আকর্ষণ করা যাবে তা বলাই বাহুল্য।