চৈতালি ঘূর্ণি এখনও পাক খাচ্ছে ঘাস ছুঁয়ে। দুপুরের হাওয়ায় ঝরে পড়ছে ডাল আলগা পলাশ। কিন্তু দেখছে কে। খাঁ- খাঁ মাঠ। শুনশান রাস্তা। শূন্য চারপাশ। জনপ্রাণী বলতে পুলিশ আর জরুরি পরিষেবার কর্মী।
বসন্তের শেষ প্রহরে উপচে পড়ছে আতঙ্ক। কোনও এক অচেনা আগ্রাসী থাবার ভয় থামিয়ে দিয়েছে সব কিছু। কোকিলের ডাক ক্লান্ত। অসময়ে ভারি। এরকম চৈত্র আগে কখনও দেখেনি মানুষ। অন্নপূর্ণা পুজোর ঢাকের আওয়াজ শোনা যায় না। রাম পুজোর বাদ্যি বন্ধ। গাজন সন্ন্যাসীর ডাক শোনা যায় না। চৈত্র সেলের আনচান নেই। কেবল ধূ ধূ বসুন্ধরা। মারণ রোগের শমন এড়াতে খিড়কি এঁটে জান বাঁচাতে ব্যস্ত মানুষ। মনের মধ্যে বিজবিজ করছে ত্রাহি ত্রাহি রব।
করোনার আতঙ্কে বন্ধ হয়েছে ধর্মস্থানের দরজা। তার প্রভাব উৎসবেও। করোনা আতঙ্কের জেরে বন্ধ এবারের রামনবমী উৎসব। গাজনও স্থগিত। তারকেশ্বর মন্দিরে গাজনের আয়োজন হয় প্রতিবার। লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসে। এ বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়েই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, করোনার আতঙ্কে গাজন উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। সর্বত্রই ছবিটা একই। বাংলায় চৈত্র মাসকে 'বাবা'র মাস' বলা হয়। 'বাবা' অর্থাৎ শিব। বাংলা ক্যালেন্ডারের শেষ মাসটি জুড়ে চলে শিব পার্বণ। এ বছর সবই স্থগিত। প্রায় সমস্ত মন্দির কর্তৃপক্ষ একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্যান্য বছর শিব ভক্তরা গাজন সন্ন্যাসী হন। গোটা চৈত্র মাস ধরার ব্রত পালন করেন। অনেককে মিলে গোষ্ঠী বদ্ধ হয়ে কৃচ্ছ সাধন চলে। সারাদিন ধরে মাধুকরী করার পর সংগৃহিত চাল, পয়সা সবজিতে স্বপাক রন্ধন। মাটিতে শুতে হয়। পরিধেয় তেও নানা বিধি আছে। চৈত্র সংক্রান্তির দিন শেষ হয় ব্রত পালন। নীল ষষ্ঠীর পরের দিন হয় চড়ক উৎসব। গাজন সন্ন্যাসীরা অংশ নেন তাতে। পরদিন নতুন বছর। পয়লা বৈশাখ।পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে গাজনের মেলা, গাজন উৎসব হয়ে থাকে। তবে এই চৈত্রে সে সবই স্তিমিত। করোনার সঙ্গে মোকাবেলায় ঘরে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছে মানুষ। প্রাণ থাকলে তবেই উৎসব!