কার্ত্তিক আর গণেশ দু'জনেই বড় হলেন। বিয়ের বয়স হল। কিন্তু, বাপমা তবুও তাঁদের বিয়ের আর নামগন্ধটিও করেন না! এদিকে বিয়ের জন্য দুই ভাইয়ের তরও আর সয় না। ইনি বলেন--'আমি আগে বিয়ে করব', উনি বলেন--'আমি আগে'। কার্তিকের যুক্তি, তিনি বড়, তাই বিয়েও তিনি আগে করবেন; গণেশ এসব ছেঁদো যুক্তির ধার ধারেন না, আগে জন্মালেই যে আগে বিয়ে করতে হবে, এমন কোন কথা নেই...। দুজনের কেউ আর নিজের জায়গা থেকে নড়েন না। সামান্য এই ব্যাপারটি নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া লাগার জোগাড় হল। কাজেই, মধ্যস্থতায় নামতে হল শিব আর পার্বতীকে। শিব বললেন, 'শোন বাপু, ওসব যুক্তিতর্কে গিয়ে কাজ নেই; তার চেয়ে দুজনের মধ্যে সুস্থ একটা প্রতিযোগিতা হোক, তোমাদের মধ্যে আগে যে ব্রহ্মাণ্ড ঘুরে আমার কাছে আসবে, আমি তারই বিয়ে আগে দেব। ঠিক আছে?'
বাবার শর্তে রাজি হয়ে গেলেন দুইভাই। কার্ত্তিক ময়ূরের পিঠে চেপে তক্ষুনি বেরিয়ে পড়লেন ব্রহ্মাণ্ড ঘুরে আসতে। বিশাল বপু গনেশের তখনও নড়চড়ের নামগন্ধ নেই। কার্ত্তিক চোখের বাইরে চলে যেতেই গনেশ একটু মুচকি হাসলেন, তারপর ঘরের ভেতর থেকে বাঘছালের আসন এনে উঠোনে পাতলেন এবং হাতজোড় করে শিব আর পার্বতীর কাছে প্রার্থনা জানালেন তার ওপরে এসে বসার জন্য। শিব-পার্বতী তো অবাক, 'ওমা, কেন?' গণেশ বলেন, 'আহা, এসো না বসই না একটু...'
শিব-পার্বতী কি আর করেন, এসে বসলেন আসনে। পাশাপাশি। তাঁরা বসতেই গণেশ তাঁদের দুজনকে একবার প্রদক্ষিণ করে সামনে এসে হাতজোড় করে দাঁড়ালেন। বললেন, 'এবার তাহলে আমার বিয়েটা দিয়ে দাও বাবা...'
'মানে?'
'মানে...শাস্ত্রে বলেছে বাবামা কে প্রদক্ষিণ করলেই ব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণ করা হয়ে যায়... তোমাদের প্রদক্ষিণ করে শাস্ত্রমতে আমার ব্রহ্মাণ্ড প্রদক্ষিণ তাহলে হয়ে গেল। দাদা এখনও ফেরেনি, তার মানে প্রতিযোগিতায় আমিই জয়ী...তাই না?'
ছেলের কথা শুনে ও তাঁর বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে শিব-পার্বতী হেসে ফেললেন। তারপর ঋদ্ধি ও সিদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিয়ে দিয়ে দিলেন। ওদিকে কার্ত্তিক হন্তদন্ত হয়ে ব্রহ্মাণ্ড ঘুরতে ঘুরতে পেছন নীচে ফিরে ফিরে দেখেন আর গনেশকে কোথাও দেখতে না পেয়ে তাঁর ভারি আনন্দ হয়! খালি ভাবেন এ প্রতিযোগিতায় তিনিই জিতবেন, ইঁদুর নিয়ে এই দৌড় জেতা গণেশের পক্ষে অসম্ভব। এসব ভাবতে ভাবতে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের চক্কর মেরে ঘরে পৌঁছতেই কার্ত্তিক খেলেন রামধাক্কা! বিয়ে-থা করে সংসারী গণেশকে দেখে এক্কেবারে থ হয়ে গেলেন। এটা হল কেমন করে? বাবা-মার মুখে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে নিজের ভালোমানুষির ওপর তাঁর ভারি রাগ হল। সেই রাগেই কোনদিন তিনি আর বিয়েই করলেন না।