বাবাকে যখন হারান তখন বয়স মাত্র চোদ্দ। উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ জেলার কুনদারকি গ্রামের মেয়ে। সেখানেই মা আর ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। পেশায় কৃষক বাবাকে হারিয়ে প্রচণ্ড দুর্যোগের মুখে পড়ল ইমার পরিবার।
উত্তরপ্রদেশের পিছিয়ে পড়া গ্রামের মেয়ে ইমা আফরোজ। মায়ের লড়াইটাও কঠিন।ছোট- ছোট দুই ছেলে মেয়ে কে নিয়ে অসহায় অবস্থা। পাড়া-প্রতিবেশিরা ইমার মা কে পরামর্শ দিত আর একটু বড় হলেই বিয়ে দিয়ে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। তাতে খানিকটা চাপ কমবে তার মায়ের।
কিন্তু ইমার মা চেয়েছিলেন লড়াইটা চালিয়ে যাবেন। তাই বাধা পড়তে দেননি ইমা আর তার ভাইয়ের পড়াশোনায়। বিয়ের জন্য টাকা না জমিয়ে পড়াশোনার জন্য টাকা জমাতেন। স্বপ্ন দেখতেন মেয়েকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেবেন তিনি।
মায়ের আশার দাম দিতে পেরেছিল ইমা। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ইমা ভর্তি হলেন দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে। দর্শনশাস্ত্রে বিএ। স্টিফেন কলেজের তিন বছরকে ইমা তার জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর বলে মনে করেন। বদলে গিয়েছিল ভাবনা চিন্তা। জীবনের লক্ষ্য আর স্বপ্নগুলো। কলেজে পড়তে পড়তেই স্কলারশিলের চেষ্টা করেন। পেয়েও যান মেধার জোরে। তাঁর সামনে খুলে যায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির দরজা। দর্শনে মাস্টার্স। অক্সফোর্ডে নিয়মিত ডিবেটের মঞ্চে দেখা যেত ইমাকে। সেখান থেকেই পেয়ে যান কাজের সুযোগ। ম্যানহাটন সিটিতে।
ট্রেনিং শেষে ঘরে ফিরতেন ইমা। বিলাসের জীবন। অ্যাপার্টমেন্টের জানলা থেকে ম্যানহাটন শহরটাকে গোটা দেখা যায়। ঝলমলে আলোয় উজ্জ্বল একটা শহর। মনে পড়ত নিজের গ্রামের কথা। সেখানে মাটির বাড়ি, আলগা দেওয়াল। টিমটিমে আলো। আর হাড়ভাঙা খাটুনিতে ভেঙে যাওয়া মায়ের মুখ।
ম্যানহাটনের উজ্জ্বল আলোগুলো মুহূর্তে ঝাপসা হয়ে আসত ইমার কাছে।
ইমা দেশে ফিরলে সাড়া পড়ে যেত গ্রামে। মায়ের টান, ভাইয়ের টান ছাপিয়ে ভেসে উঠত আরও কিছু মুখ। দুঃস্থ, দরিদ্র কিন্তু চোখে চিকচিক করে যাদের ভালবাসা। তাকে দেখে যেন ভরসা পেত সেই মুখগুলো।
নিউইয়র্কে ফিরে গিয়েও পিছু ছাড়ত না। গান্ধী দর্শন প্রিয় ছিল ইমার। সে পথেই পা বাড়ালেন। ফিরে এলেন নিজের গ্রামে।
গ্রামেই দুঃস্থ শিশুদের জন্য গড়ে তুললেন সংগঠন। কিন্তু আরও বড় মাপের কিছু করতে চাইছিলেন। অন্য মানুষের কাছেও যাতে পৌঁছান যায়।
ঠিক করলেন সিভিল সার্ভিসে যাবেন। আইপিএস পরীক্ষায় বসলেন। ২০১৭ এর ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস পরীক্ষায় গোটা দেশের মধ্যে ২১৭ র্যাঙ্ক করেন ইমা। হিমাচল প্রদেশ ক্যাডারে ১৬ মাস ট্রেনিং ।
ইমা আফরোজ বলেন, তাঁর মা আর ভাই কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাঁকে সাফল্যের সিঁড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তাই কাঁটা বিছানো সত্ত্বেও তিনি হাঁটতে পেরেছেন স্বচ্ছন্দে। এবার তাঁর ফিরিয়ে দেওয়ার সময়। তাঁর মা, পরিবার আর দেশের মানুষকে।