রামজল মিনা। দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরে রাশিয়ান ভাষা অনার্সের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন ছাত্র। এই অব্দি সব কিছুই স্বাভাবিক। কিন্তু গতকাল থেকে এই নামটাই বিখ্যাত হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে, বলা ভালো সমগ্র দেশবাসীর কাছে। সকলেই কুর্নিশ জানাচ্ছে রামজলকে। কারন? কারনটা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বিশ্বাস করতেও ঘোর কাটেনা। হাতের মোবাইল যখন দিনের পর দিন হয়ে উঠছে অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত হবার হাতিয়ার, সেখানে কেউ যে একাগ্রতার সঙ্গে পড়াশুনো করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠবে, এমনটা যেন এই শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে শুনতে, জানতেও ভালো লাগে।
বাবা দিন মজুর। রাজস্থানের কারাউলির ভাজেরা গ্রামের বাসিন্দা রামজল ছোট থেকেই পড়াশুনোয় ভালো ছিলেন। তবে স্কুলের পর পড়াশুনোর পাট চোকাতে হয়েছিল। কারণটা অবশ্যই একদিকে যেমন আর্থিক অবস্থা, অন্যদিকে ছিল যাতায়াতের অসুবিধে। প্রত্যন্ত গ্রামে থাকার কারণে বাড়ি থেকে সবথেকে কাছের কলেজ ছিল প্রায় ২৮ কিমি দূরে। তারপর কাজ খুঁজতে বাড়িছাড়া। আসেন দিল্লিতে। কাজ খুঁজে নেন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে। সেই দিন কি তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিলেন, একদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন? ৩৪ বছরের এই রাজস্থানি যুবক প্রমাণ করে দিলেন, শিক্ষার কোনো বয়স হয়না। নিষ্ঠাটুকু সম্বল করেই এগিয়েছেন রামজল। গত বছর রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস এবং হিন্দি নিয়ে পাশ করেছেন রামজল।
রামজলের কথায়, জেএনইউ তে কেউই সামাজিক বৈষম্যে বিশ্বাসী নয়। শিক্ষক এবং সেখানকার পড়ুয়ারাই তাঁকে সাহায্য করেছেন বলে জানান তিনি। এখানে চাকরি করতে এসেই তাঁর জীবনটা বদলে গেছে বলে তিনি জানান।এখানকার পড়াশুনোর পরিবেশ, তাঁকে স্বপ্নপূরণের দিকে ক্রমাগত এগিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি। নিজের ডিউটি সেরেই বইপত্র নিয়ে বসে পড়তেন রামজল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পিডিএফ নোট দিয়ে সাহায্য করত। নিজেও ফোনের অ্যাপ দিয়ে সংবাদপত্র পড়তেন।
Delhi: Ramjal Meena,a security guard at Jawaharlal Nehru University(JNU) has cleared JNU entrance examination for admission into BA Russian (Hons).He says,"I come from a village in Rajasthan.I was a bright student but I couldn't continue my education due to financial constraints" pic.twitter.com/F8y7w9xJlu
— ANI (@ANI) July 16, 2019
এটুকুতেই থেমে থাকতে চাননা রামজল। দেশ-বিদেশ ঘুরতে চান। তাই বিদেশী ভাষার চয়ন। চান সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় বসতে। বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য 'এম জগদীশ কুমার'। তিনি জানান, এখানকার বিশেষত্বই হল সমাজের যে কোনো স্তরের পড়ুয়াদের এখানে উৎসাহ দেওয়া হয়। তাদের চিন্তাধারাকে আরও ধারালো করার চেষ্টা করা হয়।
তবে জেএনইউ-এর নিয়ম অনুযায়ী কেউ এখানে পড়াশুনো করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করতে পারেনা। বর্তমানে রামজল ১৫ হাজার টাকা মাইনে পান। তার দুই মেয়ে সোনিয়া এবং করিশ্মা এ বছর স্কুলে টপার হয়েছে বলে জানিয়েছেন গর্বিত পিতা।
তিন সন্তানের বাবা রামজলের তাই এখন চিন্তা, কাজ না করলে সংসার কিভাবে চলবে। তবে উপায় একটা বেরিয়ে আসবেই বলে সকলেই বোঝাচ্ছেন রামজলকে।