কথায় বলে ‘বাঙালিদের দ্বারা ব্যবসা করা অসম্ভব’। সত্যি কি তাই? অনেকের মুখেই শুনি বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী, কিন্তু বাংলায় সেই লক্ষ্মী কি স্থির? এই বিষয়ে সবার এক মত নয়, তাই কথা উঠলে তর্ক-বিতর্ক হবেই। কিন্তু এই সব কথাই অবিশ্বাস্য করে তুলেছিলেন এক বাঙালি। স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হবেন তিনি। তাই করে দেখিয়ে দিয়েছেন। ছোট করে শুরু করে আজ দেশের জনগণের মুখে মুখে তিনি।
শুরু করেছিলেন এক মাইক্রোফিনান্স সংস্থার হাত ধরে। তারপর ধীরে ধীরে সেই সংস্থা বড় হয়ে উঠল। সাল ২০১৪, সেই বাঙালি ব্যক্তিটি জন্ম দিল এক ব্যাঙ্ককে। বুঝতেই পারছেন কোন ব্যাঙ্ক? সাধারণের সাথে ‘বন্ধন’ বাঁধতেই শুরু করলেন বন্ধন ব্যাঙ্ক। তিনি আর কেউ নন বন্ধন ব্যাঙ্কের এমডি এবং সিইও, চন্দ্রশেখর ঘোষ।
একটা সময় নিজের জীবন শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। আজ সেই মানুষটি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গেছেন। অনেক বাধা কাটিয়ে তবেই সেই চূড়ায় পৌঁছতে পেরেছেন তিনি।
আগরতলার বাংলাদেশী এক পরিবারে জন্ম হয় চন্দ্রশেখর বাবুর। বাবার মিষ্টির ব্যাবসা ছিল। সক্কাল সক্কাল স্কুল যাওয়ার আগে বাবার সাথে মিষ্টির দোকানে প্রচুর কাজ করতেন। তারপরেই স্কুল যেতেন। খুব গরীব ঘরের ছেলে ছিলেন তিনি। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন এক মেধাবী ছাত্র আর স্বপ্ন চ্ছিল অনেক বড় হবার।
সংসারের বোঝা কাঁধে পড়তেই তখন ভেবে নিয়েছিলেন, আর্থিক অবস্থা ঠিক করতে কিছু একটা ভালো করতে হবে। এরপর ব্যাঙ্ক থেকে দু’লক্ষ টাকা ধার নিয়ে দুটো কর্মচারী ও স্ত্রী নীলিমাকে নিয়ে ‘বন্ধন’ নামক একটি এনজিও চালু করেন চন্দ্রশেখর ঘোষ। তারপর অনেক বাধা পেরিয়ে সেটিকে ব্যাঙ্কে পরিণিত করার চেষ্টা করলেন।
২০০৭ সালে ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী ৫০টি প্রতিস্থানের মধ্যে থেকে ‘বন্ধন ব্যাঙ্ক’ গোটা দেশে প্রথম এবং বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। এরপর শুরু চন্দ্রশেখর বাবুর সাফল্যের যাত্রা।
তিনি এখন সফল ব্যবসায়ী। তাই আপনি বাঙালি হয়ে ব্যবসা করে সফল হতে চান? কিভাবে করবেন সেই ব্যাবসা? কিভাবে হয়ে উঠবেন সফল উদ্যোগপতি? এক সংবাদমাধ্যমে ব্যাবসার বিষয়ে সেই সমস্ত সফলতা পাওয়ার টিপস দিলেন বন্ধন ব্যাঙ্কের এমডি এবং সিইও চন্দ্রশেখর ঘোষ।
চন্দ্রশেখর ঘোষের মতে, যদি ব্যবসায় সফল হতে চান তাহলে সবার প্রথমে যেটা দরকার হল সেটা হল আত্মবিশ্বাস। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখাটা খুব দরকার। সেটাই সব মানুষকে সফল করে তোলে। তার জন্য আপনি কোনও আইডলের অনুপ্রেরণায় কাজ করলে তাতে মনোবল বাড়তে পারে কিন্তু সেটা পুরোপুরি বাড়বে না। কারণ যদি আত্মবিশ্বাসটাই না থাকে তাহলে কোনভাবেই সফল হওয়া সম্ভব না।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে বড় ব্যবসায়ী সংস্থার শুরুটাই একেবারে ছোট দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু ‘ভিশন’টা বড় রাখতে হবে। নিজের লক্ষ্য হিমালয়ের মত স্থির রাখতে হবে এবং ধীরে ধীরে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। এই পথ ধরলেই খুঁজে পাওয়া যাবে সাফল্যের চাবিকাঠি।
তিনি আরও একটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন।সেটা হল পরিশ্রম। তাঁর কথায় সাফল্যে পেতে গেলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সেই রাস্তায় প্রচুর বাধার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু সেই বাধা সাময়িক ভাবে থাকবে, চিরস্থায়ী নয়। এটাই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
চন্দ্রশেখর ঘোষ ভারতে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ভবিষ্যত নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন যে যেকোনও দেশের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ব্য়াঙ্কিং ও ফিনান্স সেক্টর। ভারতবর্ষে সেই সুযোগ রয়েছে। তাই দেশের অর্থনীতিকে আরও সবল করতে গোটা সেক্টরটি আরও সাহায্য করবে। তাঁর কথায় গ্রাম-অঞ্চলে ব্যাঙ্কের শাখা শহরের তুলনায় অনেকটাই কম রয়েছে। কিন্তু এখন গ্রামের দিকে ব্যাঙ্ক পরিষেবা বাড়ছে। তবে গ্রামে পরিষেবা দিতে অসুবিধা রয়েছে। তাই তিনি ভরসা রেখেছেন ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংয়ের উপর। কারণ ডিজিটাল ব্য়াঙ্কিংয়ের মাধ্যমেই সহজে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে দেশের প্রত্যেকটি কোণায় কোণায়।
চন্দ্রশেখর ঘোষ এতদিনে বাঙালি হয়ে যেটা করে দেখিয়েছেন, সেটা কোনও বিশিষ্ট ব্যাবসায়ীও করতে পারেনি। তাঁর জীবনের সেই সফলতার গল্প শুনলে অনেকটাই ‘ইন্সপাইরিং’ মনে হবে সবার। হেরে যাওয়ার পাত্র তিনি নন। তাই সকল মানুষকে তিনি সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন বাড়ে বাড়ে।