জন্ম অন্দরে তাই প্রকৃতির ছোঁয়া পায়নি এখনো। কিন্তু তারা বনের প্রাণী। তবে নিজের চোখে অরণ্য এখনো দেখেনি। কারণ জন্ম চিড়িয়াখানায়। তাই সেই সূত্রে বেড়ে ওঠাও সেখানে। কিন্তু এবার তারা খোলা প্রকৃতিতে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। দিন গুনছে তারই অপেক্ষায়। তবে এতক্ষণ ধরে যাদের নিয়ে কথা বলছি তারা হল দার্জিলিং চিড়িয়াখানার লাল পান্ডা। এই বিষয়ে রাজ্য চিড়িয়াখানা-কর্তৃপক্ষের খবর, আগামী এপ্রিলের শেষ দিকে চারটি লাল পান্ডাকে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। চিড়িয়াখানার ঘেরাটোপে জন্মানো লাল পান্ডাকে এ ভাবে এর আগে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। তাই এবার নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়ে চিড়িয়াখানা-কর্তৃপক্ষের সদস্য-সচিব বিনোদ যাদব বলেন, সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানে গৈরিবাসের কাছে একটি বড় এলাকা ঘিরে দেওয়া হয়েছে। তার ভিতরেই রেডিও-কলার পরিয়ে প্রাথমিক ভাবে চারটি পান্ডাকে ছাড়া হবে। সেখানে অনুকূল পরিবেশ ও পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ওই ঘেরাটোপে অন্তত ছ’মাস থাকার পরে স্বাভাবিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পরে এদের ছাড়া হবে আরও বড় এলাকায়-এমনটাই বলেন তিনি।
তাছাড়া আরও জানা যায় যে, আবদ্ধ এলাকায় জন্মানো এই পান্ডা গুলি প্রকৃতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারছে কি না, পারলে কী ভাবে খাওয়াচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে তার উপরে নজর রাখতেই রেডিও-কলার পরানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি ওই এলাকায় বনকর্মীরাও নজরদারি চালাবেন। এই পান্ডাদের জঙ্গলে ছাড়ার কথা চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। প্রকৃতির কাছে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ওই বনাঞ্চল লাল পান্ডাদের স্বাভাবিক বাসভূমি। এই বিষয়ে, সদস্য-সচিব বিনোদ বাবু জানান, অরণ্যে বংশবৃদ্ধির জন্য দু’টি পুরুষ এবং দু’টি মহিলা পান্ডাকে নিয়ে আলাদা আলাদা জোড়া করা হবে। দম্পতির যাতে জিন-চরিত্র এক না-হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই জন্য চিড়িয়াখানার পান্ডাদের জিন-চরিত্র বিশ্লেষণ করছেন কল্যাণীর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার) এবং হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (সিসিএমবি)-র গবেষকেরা। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই জোড়া বাছাই হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে বন দফতরের খবর, গৈরিবাস ছাড়াও ভবিষ্যতে সিঙ্গালিলা এবং নেওড়াভ্যালিতে ফের পান্ডা ছাড়া হবে। জিন-মানচিত্র তৈরি থাকলে নতুন জোড়া বাছতে সমস্যা হবে না। সিঙ্গালিলা ও নেওড়া উদ্যানে পান্ডার বাসস্থান নিয়ে সমীক্ষা করছে বন দফতরের ‘জিআইএস’ শাখা।