‘ভেগান’ অর্থাৎ খাদ্য তালিকা থেকে প্রাণীজাত এবং দুগ্ধজাত খাবার বাদ দেওয়া। যারা এই ধরণের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন তাদেরকে ভেগান বলা হয়। কিন্তু ভেগান হলেই যে প্রাণীদের প্রতি সবার সমান ভালবাসা থাকবে, এমনটা নয়। ‘ফ্রিডম ফার্ম’ এই ধারণার উর্দ্ধে গিয়ে নজির তৈরি করেছে।
ইসরায়েলের টেল-আভিভ শহরে অবস্থিত ‘ফ্রিডম ফার্ম’ এমন এক জায়গা যা ঘুরে দেখা ছাড়াও উপলব্ধি করা যায়, যেখানে মানুষের সঙ্গে এক পরিবারের সদস্যদের মতোই বসবাস করে অন্যান্য প্রাণীরা। এই ফার্মের মালিক ও তত্ত্বাবধায়ক হলেন অ্যাডিট রোমানো ও মেইতাল বেন আরি। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ফুড ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রাণীদের বাঁচানো এবং মানুষ ও প্রাণী একত্রে যাতে থাকতে পারে তার যথাযথ মানসিকতা ও স্থান তৈরী করা। তাদের বিশ্বাস যে, জ্ঞানই শক্তি। তাই যে সব মানুষ সেখানে যান তাদের নির্দিষ্ট কিছু প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রাণীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। এর মূল উদ্দেশ্য, মানুষদের প্রাণীকুলের প্রতি সংবেদনশীল করে তোলা, তাদেরকে ভালোবাসতে শেখা। প্রত্যেকেরই সম্প্রীতি ও শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং মানুষ নয় বলে তাদের প্রতি সমবেদনা মূলক আচরণ করা হবে না, এই ধারণার তীব্র বিরোধী অ্যাডিট ও মেইতাল।
ফ্রিডম ফার্মের সমস্ত পশু-পাখির রয়েছে একটি নির্দিষ্ট নাম এবং রয়েছে থাকার জন্য আলাদা আলাদা ঘর। রয়েছে শার্লি নামের একটি ‘টারকি’ মোরগ, তার সৌন্দর্য্যের জন্য তাকে ডাকা হয় মেয়েদের নামে, রয়েছে সিন্ডি নামের একটি গরু, ওমার নামের একটি ছাগলছানা, খরগোশ এবং রয়েছে আরও অনেক পশু-পাখি। এখানে থাকা প্রতিটি প্রাণীকেই পরিবারের সদস্যের মতো দেখভাল করা হয়ে থাকে। খাবার, ওষুধপত্র ছাড়াও তাদের জন্য হুইলচেয়ার, প্রস্থেটিক লেগ অর্থাৎ নকল পা ইত্যাদির ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে তাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য। থাকে মিউজিক সেশন। ৩০০০জন ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজ করেন এখানে।
যেসব প্রাণীদের হয়তো কখনও ব্যবহার করা হতো মানুষের রসনাতৃপ্তির রসদ হিসাবে, ভাগ্যবশেই তারা আজ ফ্রিডম ফার্মের সদস্য, কসাইখানার নয়। ২০০-টিরও বেশি প্রাণীকে উদ্ধার করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে। তাদের নিয়েই তৈরী হয়েছে এই খামার।
এখানে থাকা প্রতিটি প্রাণী যে ধরণের বিলাসবহুল জীবন এখানে কাটায় তা হয়তো অনেক মানুষেরই কল্পনাতীত। কিন্তু শুধুমাত্র প্রাণীদের রক্ষা করা এবং তাদের এরকম একটা জীবন দেওয়া –এটিই তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। তাঁরা চান ২০০ মিলিয়ন মানুষের পর্যাপ্ত শিক্ষা। যাতে সকলেই এটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন এবং সকলের মধ্যেই প্রাণীকূলের প্রতি ভালোবাসার উদ্রেক ঘটে।
বিশেষত যেসব শিশুরা এই ফার্মে আসে এবং ভোজ্য প্রাণীদের জীবিত-খুশী-সুস্থ অবস্থায় দেখে, তখন তাদের মনে পশু-পাখী-মানুষ নির্বিশেষে ভালোবাসার বোধ জন্ম নেয়। আর এটাই এই ফার্মের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষের প্রধান উদ্দেশ্য। সমগ্র বিশ্বের মধ্যে এই জায়গাটি বোধহয় সত্যিই উদাহরণযোগ্য। অ্যাডিট ও মেইতাল-এর মতো মানসিকতা যদি সব মানুষের মধ্যে থাকে তাহলে পৃথিবী হবে অন্য রকম, হিংসা-বিদ্বেষ নয় সাম্য-ঐক্যের ভাষা সহজেই বুঝবে মানুষ।