ফুটবল কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার

জার্মানির ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার তিনি। অপর নাম কাইজার বা সম্রাট। মিডফিল্ডার থেকে ডিফেন্ডার, সফল দুই পোজিশনেই। প্লেয়ার থেকে কোচ, বিশ্বজয়ে সফল দুই ভূমিকাতেই। তিনি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।


পেলের মতোই তিনিও সম্রাট। নেতৃত্বের গুণাবলীর জন্যই বেকেনবাওয়ারকে কাইজার বা সম্রাট বলা হত। কাইজার প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন মিডফিল্ডার হিসেবে। টুর্নামেন্টে ৪টি গোল করেন তিনি। ব্রোঞ্জ বল পান। কিন্তু সেবার ভাগ্যে কাপ ছিল না জার্মানদের। বিতর্কিত ৬৬'র ফাইনালে হারতে হয়। সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা পান বেকেনবাওয়ারই।

Beckenbauer1

১৯৭০ বিশ্বকাপ। পেলের শেষ বিশ্বকাপ। কোয়ার্টার ফাইনালে সামনে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডে। এবার বেকেনবাওয়ার ডিফেন্ডার। কাইজার দক্ষতায় মাত ইংল্যান্ড। ৩-২ গোলে ম্যাচ জেতে জার্মানি। কিন্তু এবার সেমিতে এসে আবার আবারও ডোবে জার্মান তরী। ইতালির কাছে হারতে হয় তাদের।

 

হাল ছাড়েননি বেকেনবাওয়ার। কাইজারের দক্ষতায় ১৯৭৪ সালে জার্মানি বিশ্বকাপ জেতে। সিলভার বল পান বেকেনবাওয়ার। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের এই মুখোমুখি হওয়াটা যথাক্রমে বেকেনবাওয়ার ও ইউহান ক্রুয়েফ দুজনের জন্যই ছিল চ্যালেঞ্জ। ক্রুয়েফ এবং তার দল ডাচ দল ‘টোটাল ফুটবল’ নামে এক ভিন্নধর্মী খেলার ভঙ্গি ফুটবলে যোগ করেছিল। যার ফলে তারা প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। প্রতি দলের রক্ষণভাগের কাছেই তাদের আটকানো প্রায় অসাধ্য হয়ে উঠেছিল। বেকেনবাওয়ারের নেতৃত্বের উপর ভর করেই পশ্চিম জার্মানি ক্রুয়েফ ও নেদারল্যান্ডসের টোটাল ফুটবলকে রুখে দিতে সক্ষমও হয়েছিল।

Beckenbauer2

বেকেনবাওয়ার বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে বুন্দেসলিগা'র চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন চারবার। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন পরপর তিনবার। ১৯৭২ ও ১৯৭৬এ খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি অর জিতেছেন তিনি।

 

কোচেদের তৈরি করে দেওয়া রণনীতি তাঁকে বেঁধে রাখতে পারেনি কোনওদিন। মাঠ জুড়ে খেলতেন। দুই স্টপারের সামনে দাঁড়ানো কেউ যে একই সঙ্গে সুইপার এবং প্রয়োজনে আক্রমণ পরিচালনা করতে পারে, সেটা তো ওঁর কাছ থেকেই শিখেছে বিশ্ব ফুটবল। বলা যায়, নতুন এক পোজিশনের জন্মদাতা ছিলেন বেকেনবাওয়ার। পাস করার অসাধারণ দক্ষতা ও বিপক্ষ গোলের সামনে আক্রমণ পরিচালনা করার ওঁর একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। সেই জন্যই তিনি বিশ্ব ফুটবলের আরও এক কিংবদন্তি।

Beckenbauer3

ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র দুজন খেলোয়াড় তিনবার করে বিশ্বকাপের অল স্টার দলে সুযোগ পেয়েছেন। একজন বেকেনবাওয়ার। ১৯৬৬, ১৯৭০ আর ১৯৭৪ বিশ্বকাপের অল স্টার দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

 

আসা যাক কোচ হিসাবে সফলতার দিকে। এক্ষেত্রেও প্রথমেই কিছু হয় যায়নি। সফলতার খুব কাছে ছিলেন। কিন্তু ফুটবল রাজপুত্র উল্টো দিকে ছিলেন। ১৯৮৬'র বিশ্বকাপ। কার্যত ডিয়েগোর কাছে হার মেনে নিতে হয়েছিল বেকেনবাওয়ারের দলকে। ৪ বছর পর তুলে নেন শোধ। ৯০ বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে মাত্র দুজন মানুষ ‘খেলোয়াড় এবং কোচ’ দুই হিসেবেই বিশ্বকাপ জিতেছেন। সেই তালিকায় নিজের নাম খোদাই করেন কাইজার

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...