ইতিহাস বিষয়টি নিয়ে অনেকেরই কিছু বিচিত্র ধারণা আছে। সে থাক। তবে অতীতকে না জানলে এগিয়ে চলা মুশকিল, আর সেই অতীত যদি প্রতি মুহূর্তে নানা তথ্যবহুল সম্পদ সাজিয়ে রাখে তাহলে তার প্রতি আগ্রহ দ্বিগুন হতে বাধ্য। এমনিও ভারত অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী দেশ। আর আজও নতুন নতুন সম্পদের নিদর্শন পাওয়া যায় নানা জায়গা থেকে। তারই নবতম সংযোজন অন্ধ্রপ্রদেশের কোন্ডাভিডুর মন্দির -আর এই নিয়েই প্রত্নতত্ত্ববিদ থেকে ঐতিহাসিকরা উচ্ছ্বসিত।
কোন্ডাভিডু এমনিতে বেশ প্রাচীন একটি স্থান। তবে বেশি বিখ্যাত এখানকার দুর্গ। কোন্ডাভিডু দুর্গটি অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার চিলকালুরিপেটের একটি গ্রামে অবস্থিত। কোন্ডাভিডু দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন প্রলয়া ভীমা রেড্ডি । এটি ছিল রেড্ডি রাজাদের রাজধানী। রেড্ডিদের রাজধানী আডাঙ্কি থেকে ১৩২৮ থেকে ১৪৮২ তে এখানে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু এই দুর্গ হাত বদল হয়ে ১৫১৬ সালে বিজয়নগর সম্রাট কৃষ্ণদেবরায়ের অধীনস্ত হয়। এই দুর্গের গুরুত্ব অনুধাবন করে গোলকোন্ডা সুলতানরা ১৫৩১, ১৫৩৬ এবং ১৫৭৯ সালে দুর্গ দখলের জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হন শেষে সুলতান কুলী কুতুব শাহ ১৫৭৯ সালে এটি দখল করে নাম রাখেন মুর্তাজানগর।
দুর্গগুলিতে হিন্দু ও মুসলিম উভয়ই স্থাপত্য শৈলীর দেখা মেলে। দুর্গের মধ্যে একটি মসজিদ অবস্থিত, এটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়।
কোন্ডাভিডু দুর্গ উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক কল্লী শিব রেড্ডির মতে, মন্দিরগুলি তৎকালীন রাজাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার ইঙ্গিতবাহী। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এই দুর্গের এতো গুরুত্ব কোথায়!! আছে, আর তা হলো সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত পাহাড়ের শীর্ষে লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দিরের অবশেষ এবং অঞ্জয়েন্য স্বামী এবং লক্ষ্মী নারসিংহ স্বামীর দুটি মূর্তি এবং কাটায়া ভেমার রেড্ডির একটি লম্বা ভাঙা প্রতিমা ঐতিহাসিক মহলে আকর্ষনের উদ্রেক করেছে। সেই সঙ্গে একটি শিবমন্দিরেরও অবশেষ পাওয়া গেছে। শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষগুলিও আবিষ্কার হয়েছিল, একইভাবে একটি পুকুর দরগায় রূপান্তরিত হয়েছে যেখানে লোকেরা এখনও প্রার্থনা করে। এখনও পরীক্ষা নিরীক্ষা বাকি। কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আগ্রহের অভাবে এই দুর্গটি এখন নিছক ট্রেজার শিকারীর স্বর্গে পরিণত হয়েছে। তবে কোন্ডাভিডু দুর্গের মতো ঐতিহাসিক স্থানে এই নতুন ইতিহাস আরও কী কী দিশা দেখায়, সেটারই অপেক্ষায় ঐতিহাসিকরা।