প্রয়াত সুরজিৎ সেনগুপ্ত

বাংলা ফুটবল জগতে আবার নক্ষত্র পতন। সুভাষ ভৌমিকের পর এবার  সুরজিৎ সেনগুপ্ত। ময়দানের সেরা শিল্পী ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত চলে গেলেন।  করোনা আক্রান্ত হয়ে  ভর্তি হয়েছিলেন বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। আজ দুপুরে প্রয়াত হলেন সাতের দশকের অন্যতম সেরা ফুটবলার।  বয়স হয়েছিল ৭০ বছর বয়সে।

চুঁচুড়ার জন্ম সুরজিতের। হুগলি জেলার ফুটবল থেকে উঠে আসা তাঁর। অশ্বিনী বরাট ছিলেন তাঁর কোচ। তিনিই কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন সুরজিৎকে। কলকাতা লিগের লোয়ার ডিভিশন ক্লাব রবার্ট হাডসন প্রথম সই করেন। ১৯৭০ সালে সেখান থেকে খিদিরপুরে যান বাঙালি উইঙ্গার। ওই বছর খিদিরপুর ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে চলে যান স্বপন সেনগুপ্ত। তাঁর বদলে সুরজিৎকে নেওয়া হয়। কোচ অচ্যুত্‍ বন্দোপাধ্যায় কোচিংই তাঁকে পাল্টে দিয়েছিল। ৭১ সাল পর্যন্ত খিদিরপুরেই খেলেন। ১৯৭২-৭৩ মরসুমে মোহনবাগানে সই করেন। দুটো মরসুম খেলেছিলেন সবুজ মেরুন জার্সিতে। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে পা দেন ইস্টবেঙ্গলে। আর পিছন ফিরে দেখতে হয়নি তাঁকে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব থেকেই সাফল্যের শিখরে উঠে পড়েন। সাতের দশকের ময়দানে অনেক কারণে সুরজিৎ নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। রাইট উইংয়ের প্লেয়ার। কিন্তু লেফট উইংয়েও খেলেছেন। উইং থেকে সতীর্থদের জন্য গোলের ঠিকানা লেখা পাস বাড়াতেন। দু’পায়ে জোরাল শট ছিল। উইথ দ্য রান ড্রিবলে ছিলেন পারদর্শী। দর্শনীয় গোলের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। বেশ কয়েকবার কর্নার থেকেই গোল করেছিলেন। এ সবই তাঁকে শিল্পী করে তুলেছিল।

 

surajit sengupta

 

১৯৮০ সালে সুরজিত সহ একঝাঁক ফুটবলার দুই প্রধান ছেড়ে মহমেডানে সই করেন। তাঁরা ওই বছর মহমেডানকে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়নও করেন। ১৯৮১ সালে আবার মোহনবাগানে ফেরেন। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত খেলার পর অবসর নিয়ে নেন। দু’বছর পর আবার অবসর ভেঙে ফেরেন সুরজিৎ। এবার জর্জ টেলিগ্রাফে সই করেন।

ফুটবলের সঙ্গে গানবাজনার প্রতিও ঝোঁক ছিল তাঁর। ছেলেবেলায় একবার সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে তবলা বাজিয়েছিলেন। গানের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ঐচ্ছিক অবসরের পর, ২০০৩ সালে আজকাল পত্রিকার ‘খেলা’ ম্যাগাজিনের সহযোগী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।

কেরিয়ার জুড়ে অসংখ্য চোখধাঁধানো ম্যাচ খেলেছেন সুরজিৎ। ১৯৭৫ সালের শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানকে ৫ গোলে হারানো ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোল ছিল তাঁরই। ১৯৭৯ সালে শিল্ডের সেমিফাইনালে থাইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে দুরন্ত গোল করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে বরদলৈ ট্রফিতে কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ খেলেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ফুটবলের জোরেই পোর্ট অওথারিটি অফ ব্যাঙ্কককে ৪-২ হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ৭৮ সাল ডুরান্ড কাপ ফাইনালে ৩-০ মোহনবাগানকে হারায় ইস্টবেঙ্গল। ওই ম্যাচে গোল করার পাশাপাশি দুরন্ত খেলেছিলেন। ১৯৭৯ সালে শিল্ডের সেমিতে থাইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল ০-১ হারছে। হঠাত্‍ তাঁর বাঁক খাওয়া শটে গোল পেয়ে যায় লাল-হলুদ। ১৯৭৫ সালে ভেটেরেন্স ক্লাবের বিচারে বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন সুরজিৎ। ১৯৭৪ সালে এশিয়ান গেমসে জাতীয় টিমে অভিষেক। ১৯৭৯ পর্যন্ত টানা ভারতীয় টিমে খেলেছেন। সেই শিল্পী আজ হঠাৎ নেই।

১৯৭২ থেকে টানা ১৯৭৯ পর্যন্ত বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে খেলেছেন। ১৯৭৬ সালে সন্তোষজয়ী বাংলার ক্যাপ্টেনও ছিলেন।  সুরজিতের প্রয়াণে ফুটবলমহলে শোকের ছায়া।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...