ফুলকপির বাহার
“ তা মুর্গিই ভালো,কটলেট,কী বলেন!” রবীন্দ্রনাথের লেখার এই উক্তিটি থেকে মনে হতেই পারে যে কাটলেট মানেই আমিষ। কিন্তু কাটলেট নিরামিষেও হয় আর তার স্বাদও হয় চমৎকার।ফুলকপির কাটলেট তেমনই এক নিরামিষ কাটলেট।
কী কী লাগবে
ফুলকপি- ১ টা( বড়)
চন্দ্রমুখী আলু-৩টে( বড়)
আদা-৩০ গ্রাম
রসুন-১ টা( ছোট)
লঙ্কা গুঁড়ো-আন্দাজমতো
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
আমচুর-১ চা চামচ
ময়দা-১ টেবিল চামচ
গরমমশলা গুঁড়ো-১ চা চামচ
চিনি-সামান্য
ধনেপাতা-১ ছোট আঁটি
ব্রেড ক্র্যাম্ব-প্রয়োজনমতো
সাদা তেল- ভাজবার জন্য
ডিম-২ টো
কীভাবে করতে হবে
ফুলকপির পাতা ছাড়িয়ে ভালো ভাবে ধুয়ে নুন দেওয়া ঈষদুষ্ণ জলে মিনিট দশেক ভিজিয়ে রাখতে হবে।জল থেকে তুলে জল ঝরাতে দিতে হবে।জল ঝরে গেলে ফুলকপি গ্রেটারে ঘষে নিতে হবে। চন্দ্রমুখী আলু সেদ্ধ করে রাখতে হবে। আদা আর রসুন বেটে নিতে হবে। ধনেপাতা ধুয়ে নিয়ে কুচি করে কাটতে হবে। আলুসেদ্ধর খোসা ছাড়িয়ে হাত দিয়ে খুব ভালোভাবে চটকে নিতে হবে। একটুও শক্ত অংশ যেন না থাকে।পেঁয়াজ আর লঙ্কা কুচিয়ে রাখতে হবে। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তাতে অল্প তেল দিয়ে গরম করে পেঁয়াজ কুচি আর লঙ্কা কুচি দিয়ে ভাজা ভাজা করে গ্রেট করা ফুলকপি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। ফুলকপি একটু ভাজা হলে আদা-রসুনবাটা দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, আমচুর, চিনি আর নুন দিয়ে মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে আঁচ কমিয়ে মিনিট সাতেক রাখতে হবে। ঢাকা তুলে ফুলকপির সঙ্গে আলুসেদ্ধ ভালোভাবে মিশিয়ে আবার মিনিট তিন/ চার রেখে গরমমশলার গুঁড়ো আর ধনেপাতা কুচি দিয়ে নেড়েচেড়ে নামিয়ে রাখতে হবে। একটা ছড়ানো থালায় এই পুরটা ঠান্ডা হতে দিতে হবে। ডিম ফেটিয়ে নিতে হবে। ব্রেড ক্র্যাম্ব একটা ছড়ানো পাত্রে ঢেলে রাখতে হবে। এবার ফুলকপি- আলুর পুর থেকে কিছুটা নিয়ে কাটলেটের আকার দিতে হবে। কাটলেট তৈরির সময় পুরটায় একটু ময়দা দিয়ে যদি পুরটা বেশি নরম মনে হলে অল্প ময়দা মিশিয়ে বাঁধন দিতে হবে। হাতে করে কাটলেট তৈরির সময় যদি হাতে লেগে যায় তবে একটু ময়দা হাতে লাগিয়ে বানাতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করে আঁচ কমিয়ে কাটলেট গুলো ডিমের গোলায় ডুবিয়ে ব্রেড ক্র্যাম্ব মাখিয়ে ভাজলেই তৈরি হয়ে যাবে হাতে গরম ফুলকপির কাটলেট। যা হাতে নিয়ে মন বলে উঠবেই আহা শীতকাল!
ফুলকপির সিঙারা
বাঙালির শীত আসে ফুলকপির সিঙারার আমেজে। মিষ্টির দোকানে টাঙানো নীল রঙের কাপড়ে লেখা ‘ফুলকপির সিঙারা আর নলেনগুড়ের সন্দেশ' মানেই শীত এসেছে। কীভাবে বানাতে হয় ফুলকপির সিঙারা সেটাই দেখা যাক।
কী কী লাগবে
ফুলকপি- ১টা ( বড়)
চন্দ্রমুখী আলু-৫০০গ্রাম
চিনেবাদাম-৫০ গ্রাম
নারকেল-আধমালা
আদা- ৪০ গ্রাম
লঙ্কা গুঁড়ো- স্বাদ অনুযায়ী
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
গোটা জিরে-২ চা চামচ
গোটা ধনে-১ চা চামচ
শুকনো লঙ্কা-২ টো
গরমমশলাগুঁড়ো-২ চামচ
সাদা তেল-ভাজবার জন্য
ঘি-৫০ গ্রাম
কীভাবে রাঁধতে হবে
ফুলকপি ভালো করে ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। কপির ডাঁটার নীচের দিকটা নেবার দরকার নেই। আলু বারবার ধুয়ে নিয়ে খোসা শুদ্ধু ছোট চৌকো চৌকো করে কেটে নিতে হবে। আদা বেটে রাখতে হবে। নারকেল মালা থেকে তুলে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। গ্যাসে তাওয়া বসিয়ে জিরে, ধনে আর শুকনো লঙ্কা ভেজে নিতে হবে। একটু ঠান্ডা হলে এই ভাজা মশলা গুঁড়ো করে রাখতে হবে। কড়াইতে সাদা তেল আর ঘি মিশিয়ে প্রথমে নারকেল, তারপর চিনেবাদাম ভেজে নিতে হবে। এরপর আর একটু তেল দিয়ে শা জিরে আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে খোসা শুদ্ধু আলু ভেজে তুলতে হবে। এরপর ফুলকপি ভেজে নিতে হবে। মোটামুটি ভাজা হলেই আদাবাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করে আলুগুলোও দিয়ে দিতে হবে। হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে নেড়ে ঢাকা দিয়ে গ্যাস কমিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। মিনিট চারেক পরে ঢাকা তুলে দেখতে হবে আলু সেদ্ধ হয়েছে কী না। চিনেবাদাম ভাজা আর নারকেল ভাজা দিয়ে ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করে গরমমশলাগুঁড়ো আর ভাজা মশলার গুঁড়ো দিয়ে বেশ ঝরঝরে পুর করে ঠান্ডা হতে দিতে হবে। একটা বড় থালায় ছড়িয়ে রাখতে হবে। ময়দা চেলে নিয়ে নুন, ঘি আর তেল মিশিয়ে ময়ান দিতে হবে। ঘি দিয়ে ময়ান দিলে গন্ধটা খুব সুন্দর হয়। ময়ানের পরিমাণ কম হলে সিঙারা খাস্তা হবে না। এরপর ঠান্ডা জল দিয়ে খুব শক্ত করে ময়দা মাখতে হবে। মাখা হয়ে গেলে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। আধঘন্টা পরে কিছুটা করে ময়দা মাখা হাতে গোল করে নিয়ে চাকি বেলনের সাহায্যে কিছুটা ওভাল আকৃতির করে বেলে মধ্যেখান দিয়ে কেটে নিতে হবে। এবার এক একটা কাটা অংশ নিয়ে হাতের সাহায্যে খোল তৈরি করে তাতে ঠান্ডা পুর দিয়ে মুখের দিকটা সামান্য জল লাগিয়ে বন্ধ করতে হবে। পুর বেশি ঠেসে ঢোকালে সিঙারা ফেটে যেতে পারে পুর ঠান্ডা না হলে সিঙারা বানালেও হবে না। কড়াইতে তেল দিয়ে গরম হলে সিঙারা দিয়ে ভেজে নিতে হবে। তেলে সিঙারা দেবার পর সাবধানে উল্টেপাল্টে ভেজে তুললেই শীতের আমেজ ধরা দেবে রসনায়।
ফুলকপির রোস্ট
“ শীতের ভোর, কোমর পর্যন্ত উঠেছে রোদ/ বারান্দায় একটা ফুলকপি তার পাশে সবুজ শিম/ তার পাশে একটা বটি”। কী আন্তরিক এক মধ্যবিত্ত ঘরোয়া জীবনছবি। শীতের ফুলকপিতে দেশি রান্নার পাশাপাশি বিদেশি রান্নাও কিন্তু দারুণ খোলে। ফুলকপির রোস্ট তেমনই এক রান্না। নানাভাবে এ রান্না করা যায়।
কী কী লাগবে
বেশ আঁটোসাঁটো মাঝারি সাইজের ফুলকপি-১ টা
পেঁয়াজ-২০০ গ্রাম
আদা-৩০গ্রাম
লঙ্কা গুঁড়ো-আন্দাজমতো
হলুদ গুঁড়ো-১ চা চামচ
গরমমশলা- ছোট এলাচ-৩টে, দারচিনি-ছোট টুকরো ৪ টে, লবঙ্গ-৪টে
গোটা গোলমরিচ-৮-১০টা
টক দই-১৫০গ্রাম
ধনেপাতা- আন্দাজমতো
পাতি বা কাগজি লেবু-১টা
সাদা তেল-রাঁধবার জন্য
চিনি-হআন্দাজমতো
নুন- আন্দাজমতো
ঘি-৫০ গ্রাম
কীভাবে রাঁধতে হবে
ফুলকপির রোস্ট নানাভাবে করা যায়। গোটা ফুলকপির রোস্ট যেমন করা যায় তেমনই বড় বড় টুকরো করে ফুলকপি কেটেও রোস্ট করা সম্ভব। যে ভাবেই রান্না করা হোক না কেন ফুলকপির পাতাগুলো ছাড়িয়ে, নীচের দিকে ডাঁটার অংশ কিছুটা ফেলে দিয়ে ঈষদুষ্ণ জলে মিনিট দশেক ভিজিয়ে রাখতে হবে। আদা,গোলমরিচ ও পেঁয়াজ বেটে রাখতে হবে। এবার যদি কপি খুব তাজা থাকে তবে সরাসরি রান্না করতে হবে। না হলে সামান্য ভাপিয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজবাটা, আদাবাটা, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, টক দই, গোলমরিচ বাটা, নুন ও চিনি সব একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার গোটা ফুলকপি অথবা ফুলকপির টুকরোতে এই মিশ্রণ ভালোভাবে সবটায় মাখাতে হবে। এইভাবে মিনিট পাঁচেক রেখে কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তাতে তেল ও ঘি মিশিয়ে গরম করে গোটা গরমমশলা ফোড়ন দিয়ে দই-মশলা মাখা গোটা ফুলকপি অথবা ফুলকপির টুকরোগুলো দিয়ে,মশলাটাও কাচিয়ে দিয়ে অল্প নেড়ে গ্যাস কমিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। একটু পরে ঢাকা তুলে খুন্তি দিয়ে কপির নীচের দিকে খুঁচিয়ে দেখতে হবে লেগে গেল কী না। দই আর মশলা মাখা ফুলকপিতে আলাদা করে জল দেবার দরকার নেই। মশলা থেকেই জল বেরোবে। এরপর আবার ঢাকা দিয়ে আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে।যদি মশলা পুড়ে যাচ্ছে মনে হয় তবে সামান্য জল দিতে হবে। কপি সেদ্ধ হয়ে এলে আঁচ বাড়িয়ে মশলাটাও ভেজে নিতে হবে। নামানোর সময় ঘি আর ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামাতে হবে। পরিবেশনের সময় লেবুর রস ওপরে দিতে হবে। গোটা ফুলকপির রোস্ট করলে পরিবেশনের সময় ছুরি দিয়ে কেটে পরিবেশন করলে এ যে মুরগির রোস্টকে হার মানাবে তা নিশ্চিত বলা যায়।